বঙ্গবন্ধু সড়কে সংঘর্ষ শুরু হলেও পরে তা সলিমুল্লাহ রোড, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কেও ছড়িয়ে পড়ে৷
Published : 18 Jul 2024, 07:41 PM
নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে শহরের চাষাঢ়া এলাকা৷
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলছে৷
শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে সংঘর্ষ শুরু হলেও পরে তা শহরের সলিমুল্লাহ রোড, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কেও ছড়িয়ে পড়ে৷
একদিকে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদুনে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ছে বিপরীতে ইট-পাটকেল ছুড়ছেন আন্দোলনকারীরা৷ পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালাচ্ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরাও৷
এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থী, পথচারী, পুলিশ ও সাংবাদিক মিলিয়ে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন৷
সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আয়ান মাহমুদ বলেন, “পুলিশ সকাল থেকে শান্ত ছিল৷ চাষাঢ়া বা দুই নম্বর রেল গেইটের কোথাও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কোনো প্রকার বাধা দেওয়া হয়নি৷
“যখন পুলিশের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া, দালাল’ বলে স্লোগান দিতে থাকে এবং একদল শিক্ষার্থী চাষাঢ়ার সোনালী ব্যাংকের দিকে আক্রমণ করে তখন পুলিশ তাদের নিবৃত করতে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে৷
“আমরা এখন পর্যন্ত শর্টগান থেকে ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়ছি৷ কিন্তু কোনোকিছুতেই তাদের দমানো যাচ্ছে না৷”
আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের অন্তত ৩৫ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা৷
এদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা ফারহানা মানিক মুনা বলেন, “সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল ও অবরোধ কর্মসূচিতে ছিলেন তারা৷ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চাষাঢ়ায় উত্তর চাষাঢ়া ও মিশনপাড়া এলাকা থেকে আসা লাঠিসোটা হাতে কিছু বহিরাগত যুবক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে পড়ে পুলিশের একটি গাড়িতে হামলা চালায়৷
“সংঘর্ষ এড়াতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিছিল সহকারে এগিয়ে যাচ্ছিলাম পুলিশ তখন মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে৷”
মুনা আরও বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন বানচাল করতে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি সংঘর্ষের দিকে নিয়েছে৷ পুলিশ চাইলে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারতো৷”
আন্দোলনরত নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী স্বর্ণালী বলেন, “হঠাৎ করে সবকিছু উল্টে গেল৷ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ছিলাম৷ পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও গুলি থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি শুরু করি৷ ভেবেছিলাম আজকে মারাই যাবো৷ চোখ-মুখ সব জ্বালা করতেছে৷ মৃত্যুকে চোখের সামনে দেখে আসছি৷”
সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে কলেজ রোডের মোড় থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অস্ত্র, লাঠিসোটা হাতে মিছিল করতে থাকেন৷ পরে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়৷
ত্রিমুখী এ সংঘর্ষের ঘটনায় শহরের দু’টি সরকারি হাসপাতালে অন্তত ৬০ জন আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন৷
তাদের মধ্যে দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাসার৷
সন্ধ্যা পৌনে ৭টায়ও বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই নম্বর রেল গেইটে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছিল৷
সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা৷ বিকেল পৌনে ৬টার দিকে শহরের ডিআইটি মসজিদের সামনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একটি মিছিল বের হয়৷ ওই মিছিল থেকেও পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়৷
আরও পড়ুন