ঝড়ে পানির তোড়ে মনপুরার তিনটি ইউনিয়নের নয়টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গেছে।
Published : 28 May 2024, 07:12 PM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দ্বীপ জেলা ভোলার দুই লাখের বেশি মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন উপজেলার বেড়িবাঁধের অন্তত ২০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এক উপজেলার নয়টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাসান মামুদ জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ভোলার সাত উপজেলার মধ্যে জেলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী অন্তত ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জোয়ারের পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া মনপুরার অন্তত ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দক্ষিণ সাকুচিয়া, মনপুরা ও হাজিরহাট ইউনিয়নের নয়টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গেছে বলে জানান তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।
ঘূর্ণিঝড়ে মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দাবি করে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. অলিউল্লাহ কাজল বলেন, “রোববার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জোয়ারের পানির স্রোতে এ ইউনিয়নের অন্তত তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“এর মধ্যে দক্ষিণ সি বিচ পয়েন্ট, নুরুদ্দিন মার্কেটের পূর্ব পাশ, ঢালি মার্কেটের পূর্ব পাশ ও উত্তর তালতলা বাজারের দক্ষিণ দিকে বাঁধ ভেঙে গেছে।”
কাটেনি রেমালের প্রভাব, বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন
রেমালের প্রভাবে ভোলায় মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। দুপুরের পর থেকে দমকা হাওয়া কমলেও কোথাও হালকা বৃষ্টি, আবার কোথাও ভারী বৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর জেলা শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চালু হলেও বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে। এখনো বেশিরভাগ এলাকায় স্বাভাবিক হয়নি মোবাইল নেটওয়ার্ক।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ওজোপাডিকা) ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ জানান, এ জেলায় ওজোপাডিকার ৫০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ২৮ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ পেয়েছেন।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছ পড়ে তার ছিড়ে গেছে। কোথাও লাইনের ওপর গাছ পড়ে আছে। গাছ সরানোর কাজ চলছে। বুধবারের মধ্যে বাকি গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পেয়ে যাবেন।”
ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. খালেদুল ইসলাম জানান, এ জেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক চার লাখ ২৮ হাজার। রেমালের তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুতের ৬৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া খুঁটি বসানোর কাজ চলছে।
মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ পেয়েছেন; বাকিরাও দ্রুত সংযোগ পাবেন বলে জানান তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত দুই লাখের বেশি বাসিন্দা
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে জেলার পাঁচটি পৌরসভা ও ৭০টি ইউনিয়নে দুই লাখের বেশি মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় রেমালে জেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা দুই লাখ ২৩ হাজার ৩০৩ জন। বাড়িঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ১৫৮টি; আর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে দুই হাজার ৪৬৫টি।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ওয়ারিসুল কবির জানান, রেমালের তাণ্ডবে এ জেলায় পাঁচ হাজার হেক্টর আউশ ধান এবং ১০ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রী বিশ্বজিত দেব জানান, অতিরিক্ত জোয়ারে জেলায় নয় হাজার ৯২৮টি পুকুর এবং এক হাজার ৪৩৯টি ঘেরের ৭৫৬ টন মাছ ভেসে গেছে; যার মূল্য প্রায় ১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ১১ দশমিক ছয় টন চিংড়ি ভেসে গেছে; যার মূল্য এক কোটি সাত লাখ টাকা। অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৬০ লাখ টাকার। ১৮৪টি জেলে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে ১৭৬টি গরু, ২৬৯টি মহিষ, ১৪৫টি ছাগল, ২১৮টি ভেড়া ভেসে গেছে। এ ছাড়া ৯ হাজার ৬১৪টি মুরগী এবং পাঁচ হাজার ১৬০টি হাঁস মারা গেছে; যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাত কোটি টাকা।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আরিফুজ্জামান জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মারা যাওয়া প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়ার পর তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান হবে।