“আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই, মেধার চর্চা করতে চাই। দ্রুতই এই বৈষম্যমূলক কোটার সংস্কার করা হোক।"
Published : 08 Jul 2024, 02:29 PM
সরকারি চাকরিতে জারি করা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল ও কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেন তারা। পরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাড়া রাস্তা ধরে তুঁতবাগান হয়ে মেহেরচণ্ডী সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
এ সময় ‘কোটা না মেধা, কোটা কোটা’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ’১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মেধাভিত্তিক নিয়োগ চাই, প্রতিবন্ধী ছাড়া কোটা নাই’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’ বলে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী এ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এ সময় কোটাপদ্ধতির সংস্কার চেয়ে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা কোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রতি জনশুমারির সঙ্গে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিক্ষোভ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, “সংবিধানের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, পিছিয়ে পড়া কিংবা অনগ্রসরদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা। কিন্তু সেখানে একবারও মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলা হয়নি। তাদের অনগ্রসর হিসেবে বিবেচিত করে বরং আরও ছোট করা হচ্ছে।"
“তাছাড়া যে প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, সেটা অর্ন্তবর্তীকালীন বা অস্থায়ীভাবে। তবে আজ সেটা স্থায়ী হয়ে, আমাদের বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই পদ্ধতির দ্রুতই সংস্কার দাবি করছি।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ফুয়াদ রাতুল বলেন, “যে দেশে সরকারি চাকরিতে ১০০ জনের মধ্যে ৫৬ জনই কোটায় সুযোগ পায়, সেখানে কোনোভাবেই মেধার মূল্যায়ন হতে পারে না। ফলে মেধাহীন জাতি তৈরি হচ্ছে এবং সবাই দেশবিমুখ হচ্ছে।
“আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই, মেধার চর্চা করতে চাই। দ্রুতই এই বৈষম্যমূলক কোটার সংস্কার করা হোক।"
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বাতিল হয় ১০ শতাংশ করে নারী ও জেলা কোটাও।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরি প্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল দেয়। রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট বা যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
এর ফলে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ হয়ে গেছে।
এরপর থেকেই ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন। ফলে আপাতত হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে।