Published : 06 Dec 2024, 06:54 PM
প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেল ১৪তম প্রজাপতি মেলা।
মেলা উপভোগ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সি ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার দর্শনার্থীরা ভিড় করেন।
‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখার আয়োজনে শুক্রবার সকাল ১০টায় মেলার উদ্বোধন করেন একই বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন।
মেলায় দিনব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি ও প্রকৃতিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির গল্পে পাপেট শো ও প্রজাপতির অরিগ্যামি প্যারেড এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
১৪তম এই মেলার টাইটেল স্পন্সর ছিল ‘কিউট’ নামের একটি সংগঠন। সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছিল প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন), আরণ্যক ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ বন বিভাগ।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে চলে এই মেলা। সেখানে সাদা রঙের জালের মধ্যে বাহারি রঙের বিভিন্ন ফুলের টব রাখা হয়। জালের ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি।
সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে দুই ছেলে নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লায়লা বানু। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রজাপতি মেলায় প্রতিবছরই আসা হয়। মেলা শুরু আগেই দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছি। তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে একটা স্বাস্থ্যকর আয়োজন, ভালোই লাগছে।”
মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেছেন, প্রজাপতিসহ সকল প্রাণের প্রতি মানুষের দায়িত্ব শুধু সহানুভূতি দেখানো নয়, তাদের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে। প্রজাপতি মেলা আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের নৈতিক বিবেচনা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
“প্রজাপতির কাছ থেকে মানুষের শেখার আছে। প্রজাপতি পরাগায়নের মাধ্যমে কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ধর্ম, বর্ণ এবং বৈচিত্র্যভেদে মানুষের কাছেও সকল মানুষ নিরাপদ হতে হবে।
“প্রজাপতির কাছ থেকে গোটা বিশ্বকে নিরাপদ রাখার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে মানুষকে। সকল ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে হবে।”
প্রকৃতির সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান উপাচার্য।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মানছুরুল হকের সভাপতিত্বে মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রজাপতি এই পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরাগায়নের মাধ্যমে প্রজাপতি পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং বনাঞ্চল রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। প্রজাপতিসহ বিভিন্ন পতঙ্গ আমাদের বাস্তুসংস্থান টিকিয়ে রেখেছে।
প্রজাপতিসহ সকল পতঙ্গ টিকিয়ে রাখতে জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারপ্ল্যান কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা মুকিত মজুমদার বাবু, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী এবং আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মুরাদ বিন আজিজ বক্তব্য দেন।
প্রকৃতি সংরক্ষণে সার্বিক অবদানের জন্য বন ও প্রকৃতি বিষয়ক সংগঠন ‘প্লানটেশন ফর নেচার’ এর প্রতিষ্ঠাতা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী সবুজ চাকমাকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির আহাম্মেদকে বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।