নয় জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৪-১৫ জনকে আসামি করেছেন ফারদিন।
Published : 14 Feb 2023, 04:04 PM
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মারধরে আহত ছাত্রলীগ কর্মী আদলতে মামলার আবেদন করেছেন।
মারধরের শিকার ছাত্রলীগ কর্মী ফারদিন কবির সোমবার দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. সুমন ভূঁইয়ার আদালতে এ লিখিত অভিযোগ দেন। আদালতের বিচারক সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সোমবার রাত ৯টায় সংঘর্ষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক সজীবুর রহমান এবং ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান স্বাধীনের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে হলের প্রভোস্ট মিজানুর রহমান খান জানান।
এ ঘটনায় আহত ফারদিন কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি মেহেদী হাসান স্বাধীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক সজীবুর রহমান, তার অনুসারী সাজ্জাদ হোসেনসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৪-১৫ জনকে আসামি করেছেন ফারদিন।
ফারদিন কবিরের আইনজীবী প্রবাল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘সোমবার দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. সুমন ভূঁইয়ার আদালতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ফারদিন। পরে বিচারক সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জালালাবাদ থানার ওসি মো. নাজমুল হুদা খান বলেন, আদালতের নির্দেশনা থানায় পৌঁছায়নি। নির্দেশনা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তারা।
আদালতে করা আবেদনে বলা হয়েছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে আসামিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ফারদিন কবিরের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি মীমাংসাও হয়। কিন্তু ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এ সময় তাকে লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করে আহত করা হয়। পরে তিনি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারদিন বলেন, হামলার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপর তিনি সিলেটের জালালাবাদ থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে মামলা গ্রহণের ব্যাপারে অনুমতি পাওয়া না গেলে মামলা নেওয়া সম্ভব নয়।
“বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখি না। এই জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।”
শাহপরাণ হলের প্রভোস্ট মিজানুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, তার হলে মারধরের ঘটনাটি বাইরের থেকে উৎপত্তি হয়েছিল। এরপরও ওই ঘটনায় হলের তিন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা তদন্তের পর প্রতিবেদন দেবেন।
তবে কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাটি শুনেছেন। কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শিগগরই তদন্ত কমিটি ঘটনাটি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দিবেন, তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফারদিন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন জানালে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ যে কেউ হতে পারে; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিয়মনীতি আছে। সেই আলোকে আমরা ব্যবস্থা নিবো।”
ঘটনার দিন বিকাল ৪টা থেকে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের তাদের ব্যাচের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য মাঠ প্রস্তুতের জন্য কাজ করছিলেন।
সন্ধ্যার পর খেলার মাঠের গ্যালারির দক্ষিণ পাশের একটি জায়গায় রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইফাত এবং তার বান্ধবী দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সজীবুর রহমানের সমর্থক রাফিউম মিলিনিয়াম ও সাব্বিরসহ তার অন্যান্য সহপাঠীরা ইফাতদের সঙ্গে কথা বলতে যান।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তখন ইফাত তার বন্ধু ফারদিন কবিরকে ফোন করে আসতে বলেন। পরে সময়ে ফারদিনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন এসে মিলিনিয়াম ও তার সহপাঠীদের মারধর করেন। পরে তাদেরকে তাড়া হলে পাঠায়।
পরবর্তীতে সজীবের সমর্থকরা শাহপরাণ হলে গিয়ে মেহেদী হাসান স্বাধীনের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় রুমে ঢুকে ফারদিনকে মারধর করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।