“উত্তরের বাতাসে শরীরটা অবশ হয়ে যাচ্ছে। গরম কাপড় গাঁয় না থাকলি ভ্যান চালানো যায় না।”
Published : 09 Jan 2025, 04:38 PM
শীত নিবারণে গরম কাপড়ের চাহিদা বাড়ায় যশোরের শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও বেড়েছে। তবে দরিদ্র আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ফুটপাটের দোকানগুলোই ভরসা।
বৃহস্পতিবার বেনাপোল, নাভারন, শার্শা ও বাগআচড়ার বাজারের ফুটপাতের দোকানগুলো ঘুরে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এসব দোকানে পুরানো শীত নিবারণের কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে।
দোকানিরা বলছেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে তাদের বেচা-কেনা। এ বছর আগে ভাগেই ক্রেতার ভিড় বাড়ায় বিক্রেতারা বেশ খুশি। শীত যত বাড়বে ক্রেতাদের উপস্থিতিও তত বাড়বে।
নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ধারে বাগআচড়া ফুটপাতে গরম কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতের দোকানি আরাফাত আলি বলেন, “এখানে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষই বেশি আসে। তবে এখন মধ্যবিত্তরাও আসছেন।”
সেখানে ইজিবাইক চালক মফিজুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, ভ্যানচালক সুলতান আলি, কৃষক মোহাম্মদ আলি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জামতলার তুহিন হোসেনসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তুহিন বলছিলেন, “শপিংমল আর শোরুমে সুন্দর সুন্দর শীতের কাপড় পাওয়া গেলেও সেগুলোর দাম আমাদের সামর্থ্যের বাইরে। এজন্য ফুটপাতের দোকানে আছি। এখানে পুরাতন কাপড়ের সঙ্গে কিছু কিছু নতুন কাপড়ও পাওয়া যায়।”
সুলতান আলি বলেন, “উত্তরের বাতাসে শরীরটা অবশ হয়ে যাচ্ছে। গরম কাপড় গাঁয় না থাকলি ভ্যান চালানো যায় না। তাই ঘুরেফিরে দেখছি কি কেনা যায়।”
বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিক বরকত আলি বলেন, “ছেলের জন্যি একটা সোয়েটার কিনিছি। আর আমার জন্য একটা জ্যাকেট কিনবো। ঘুরেফিরে দেখছি; এখনও পছন্দ মত হয়নি।”
নাভারন বড় মসজিদের সামনে ফুটপাতের ওপর পুরাতন কাপড়ের স্তুপ সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় ছিলেন দোকানি সায়েদ আলি। কৃষক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক ও রিকশা-ভ্যান চালকরাই তার দোকানের মূল খরিদদার। পাশাপাশি যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, তারাও আসেন বলে জানালেন।
সায়েদ বলছিলেন, “জ্যাকেট, সোয়েটার, চাদর, কোর্ট, মাফলার, হাত মোজা ও পা মোজা বেশি বিক্রি হচ্ছে। কম মূল্যের অন্যান্য নতুন কাপড়ও কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে।”
পাশেই জহুরুল হক নামের এক বিক্রেতা বলছিলেন, “শীত বাড়ায় শীতের কাপড় কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড়ও বেড়ে গেছে। আমরাও চাহিদা মতো কাপড় রাখার চেষ্টা করছি। তবে এ বছর দোকানে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতাই ফিরে যাচ্ছেন।”
নাভারন বড় মসজিদের সামনের ফুটপাত থেকে একটি পুরাতন জ্যাকেট কিনে ফিরছিলেন বাগআচড়ার টেংরা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, “কুয়াশার ও শীতের মধ্যে ভোরবেলায় ইজিবাইক নিয়ে বের হই। ঠান্ডায় একেবারে কাহিল হয়ে যাই। ভাবছিলাম দেড় থেকে দুইশোর মধ্যে একটা জাম্পার কিনব।
“এসে দেখি দাম বেশি। শীতের মধ্যেও কাজ করাই লাগবে। তাই সাড়ে ৩০০ টাকা দিয়ে জ্যাকেটটা কিনেছি।”
খলিলুর রহমান নামের একজন কলেজ শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় নাভারন নিউ মার্কেট এলাকায়। তিনি ছেলের জন্য জ্যাকেট কিনতে এসেছিলেন।
এ শিক্ষক বলেন, “একটি জ্যাকেট, মাফলার ও হাতমোজা কিনলাম। দাম অন্যাবারের চাইতে এবার একটু বেশি।”
বেনাপোলের লালমিয়া সুপার মার্কেটের ‘আর ফ্যাশন কর্নারের’ মালিক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, “শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম কাপড়ের বেচাবিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে। বেচাবিক্রি মোটামুটি ভাল। শীত যত বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড় তত বাড়ছে।"