বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকায় গুলিবিদ্ধের তিন মাস পর সিএমএইচয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোরের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মারা যান।
Published : 14 Nov 2024, 09:00 PM
“কোটা প্রথা বাতিল হলে মেধায় একটা ভালো সরকারি চাকরি হবে। চাকরি হলে বাবা-মার দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। আন্দোলন সফল হয়েছে কিন্তু আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হল না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় গুলিতে আহতের তিন মাস পর বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মা মাবিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন।
২৩ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বড়আচড়া গ্রামের টার্মিনাল পাড়ার আব্দুল জব্বারের ছেলে। তিনি রাজধানীর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানান সোহরাওয়ার্দী কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক কাজী সাইফুল ইসলাম।
ছেলের কথা জিজ্ঞাস করলে মা মাবিয়া বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, “আব্দুল্লাহ মেধাবী ছাত্র ছিল। তার আস্থা ও বিশ্বাস ছিল, কোটা প্রথা বাদ না হলে, যত ভাল লেখাপড়া করুক না কেন এ দিয়ে কোনো কাজে আসবে না।
“কোটা প্রথা বাতিল হলে মেধায় একটা ভালো সরকারি চাকরি হবে। চাকরি হলে, বাবা-মার দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। সবার মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু তার সে স্বপ্ন পূরণ হল না। পুলিশের গুলিতে সব শেষ হয়ে গেল।”
আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার বেনাপোল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলেন তার ছেলে। গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দিন ৫ অগাস্ট সন্ধ্যায় ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল্লাহ।
প্রায় দুই-তিন ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকার পর প্রথমে তাকে মিটফোর্ড, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাতে অপারেশনের পর ডাক্তাররা তার ‘সুস্থ হওয়ার’ বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। কয়েকদিন পর তাকে ছাড়পত্র দিলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যায় পরিবার।
কিন্তু পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে এনে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২২ অগাস্ট তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হলে সেখানেও তার অস্ত্রোপচার হয়। শেষ পর্যন্ত সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন আব্দুল্লাহ।
আব্দুল্লাহর বাবা জব্বার বলেন, “মোহাম্মদপুরে ছেলেকে গোসল করানো হচ্ছে। এরপর তাকে তার কলেজে নিয়ে যাব, সেখানে তার জানাজা হবে।
“বাদ মাগরিব শহীদ মিনারে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাব, সেখানেই তার দাফন হবে।”
এদিকে বেনাপোল স্থলবন্দরে নির্মিত কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল উদ্বোধন করতে গিয়ে ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবর পান নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। পরে বিকালে আব্দুল্লাহর বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন তিনি।
আরও পড়ুন: