Published : 27 Dec 2024, 08:29 PM
মানুষের জন্য কাজ করার বিনিময়ে দেশবাসীর কাছে সহানুভূতি প্রত্যাশা করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, “আপনাদের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে দুই-একটি জিনিস চাই। আমরা যদি দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করি, তাহলে আপনাদের অন্তরের ভালবাসা চাই। ভালবাসার সঙ্গে যেন সমর্থন ও সহযোগিতা পাই। সমর্থন ও সহযোগিতার পাশাপাশি জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যেন আপনাদের পাশে পাই। এই জাতিকে বদলে দেওয়ার জন্য যেন আপনাদের অন্তরে একটা জায়গা পাই।
“এই চারটা জিনিস যদি দেশবাসী আমাদের উপহার দেয়, আমরা দেশবাসীর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো। ক্ষমতায় যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়, দেশে সুশাসন কায়েম করা আমাদের উদ্দেশ্য।”
শুক্রবার সকালে যশোর ঈদগাহে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, “৫ অগাস্টের আগে দেশ দুঃশাসনে পরিপূর্ণ ছিল। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন দুঃশাসন জুলুম করেছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, জুলুমের কষ্ট বেশি ছিল। বাংলাদেশ, বিশ্বের মানুষ কল্পনা করতে পারেনি ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন হবে। ফ্যাসিস্ট পতনের এই অর্জনের নেতৃত্ব আমাদের সন্তানদের।
“ফ্যাসিস্ট সরকার হাতুড়ি, হেলমেট বাহিনী দিয়ে গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমাতে চেয়েছিল। আমাদের বীর সন্তানরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তাদের এই গৌরব, অভিভাবক হিসেবে আমাদেরও।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমরা যাদের চোর, ডাকাত হিসেবে চিনি, তাদের সক্ষমতা কতটুকু? কিন্তু কলমের খোঁচায় যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে, তারা বড় চোর-ডাকাত। আওয়ামী লীগ ও তার দোসরা ডাকাতি করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের পুঁজি দিতে পারছে না।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতিকে সচল করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই অর্থনীতি আরও গতিশীল হোক। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আরও উদ্যোগী হোক।”
জেলা জামায়াত ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে দলের আমির বলেন, “জামায়াতে ইসলামী দেশবাসীর সেবা করা সুযোগ পেলে এদেশে চাঁদাবাজির অস্তিত্ব থাকবে না। দখলদারের অস্তিত্ব থাকবে না। ঘুষ থাকবে না। আমরা ফ্যাসিবাদ, সাম্রজ্যবাদের প্রশ্রয় দেবে না, এমন জাতি গড়তে চাই।”
দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে শফিকুর রহমান বলেন, “একদল চাঁদাবাজি করে চলে গেছে। আরেক দল আসুক, আমরা চাই না। দেশে কি চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে ? হাতবদল হয়েছে। এজন্য তো এতে মানুষ শহীদ হননি। আমরা যেন শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি না করি।
“এসব ঘৃণিত কাজ করলে শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি হবে। আপনারা এই ঘৃণিত কাজ করবেন না। ফুটপাত, হাটঘাট, বালুমহাল, জলমহাল দখল, চাঁদাবাজিতে কোনো নেতাকর্মী পা দিবেন না।”
দেশের সব মানুষের সমান অধিকার উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, “দেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই। সবাই সাংবিধানিকভাবে সমান। ধর্ম-বর্ণ মিলেমিশে আমরা বসবাস করি। আল্লাহর কাছে জবাবহিদিতা যার যার ধর্মে করবে। কেউ যদি আপনাদের সংখ্যালঘু বলে, চিৎকার করে বলবেন, আমরা রাষ্টের নাগরিক, সবার অধিকার সমান।”
নারীর অধিকার নিশ্চিতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে নারীর অধিকার নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়। আমরা নাকি নারীদের বন্দি করে রাখবো। আমরা বলতে চাই, জামায়াতে ইসলাম নারীদের মায়ের জাতি হিসেবেই দেখতে চায়। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হবে। তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।”
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন, মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, মাওলানা আজিজুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আমীর অধ্যাপক আলী আযম, সাতক্ষীরা জেলা আমীর শহিদুল ইসলাম মুকুল, মাগুরা জেলা আমীর এম বি বাকের, নড়াইল জেলা আমীর আতাউর রহমান বাচ্চু, যশোর জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমানসহ অন্যরা এ সময় ক্তব্য রাখেন।