এবার ৯ হাজার ২০০ কৃষককে ২০৩ মেট্রিক টন বীজ ও সার প্রদান করা হয় বলে জানায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
Published : 07 Nov 2023, 08:36 PM
নবান্নের আগে আগাম জাতের আমন ধান কাটাই-মাড়াই শুরু করে দিয়েছেন নেত্রকোণার কৃষকরা। এ মৌসুমে অতিবৃষ্টির কবলে পড়লেও তা কাটিয়ে রোপা আমন ধানের ভালো ফলন পেয়ে খুশি এখানকার কৃষক।
এদিকে জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের আন্তরিকতা আর কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা আবাদের শুরু থেকেই পাশে থাকায় ভালো ফলন ফলানো সম্ভব হয়েছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, আগাম জাতের ধান আবাদ করায় সহজেই তারা একটি বাড়তি ফসল ঘরে তুলতে পারছেন।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ১০ উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৫৮০ হেক্টর। কিন্তু এর থেকে এক হাজার ৫১০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ অর্জিত হওয়ায় মোট লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় এক লাখ ৩৪ হাজার ৯০ হেক্টরে।
মঙ্গলবার সরজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে শোভা পাচ্ছে পাকা সোনালি ধান। জমিতে ধান কাটার পর আঁটি বেঁধে গৃহস্থের উঠানে তুলে তা মাড়াই করছেন শ্রমিকরা। বিভিন্ন জায়গায় ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।
সদর উপজেলার অরঙ্গাবাজ গ্রামের কৃষক মো. ফয়েজ উদ্দিন বলেন, “আগাম ৭৫ ধান কাটা আরম্ভ করছি। মোটামুটি ভালাই ফসল হইছে। কৃষি অফিস থেইক্যা আমরারে এই বীজটা দিছে। তারাই বীজডা দেয়, সারও দিছে। আগাছাডা কাডনের পয়সাও দিছে। ফলন ভালাই পাইছি। একটু পানিতে ক্ষতি হইছে। ক্ষতিডাও তেমন পাইছে না। পোষায়া গেছে। আমরা লাভবানই হইছি।”
একই গ্রামের আরেক কৃষক আয়েন উদ্দিন বলেন, “স্বল্পকালীন জাতের আগাম ধান লাগাইছিলাম। অহন কাটতাছি। আগাম ধান লাগায়া আমরার লাভের মধ্যে লাভ একটা ফসল বাড়তি করতাম পারি। অহন এই ক্ষেতের মধ্যে সরিষা লাগায়াম। সরিষা কাইট্যা পরে আবার বোরো আবাদ করবাম।
“সব মিলায়া আমরার লাভই হয়। এইবার ধানও কিন্তু ভালাই হইছে। কাঠাপ্রতি ৬ থেকে ৭ মণ ধান হইছে। অহন বাজারে কাঁচা ধান ১০৫০ থেকে ১০৬০ টাকা করে বেঁচতাছি।”
কেন্দুয়া উপজেলার সাগুলি গ্রামের কৃষক ফজর আলী বলেন, “আগাম জাতের ধানডা আবাদ কইর্যা সবচেয়ে বেশি লাভ হয় তিনটা ফসল করতে পারি। এখন ধানটা কাইট্যা সরিষা আবাদ করতে পারবাম। পরে বোরো করবাম। এখন দিন রাইত কাজ করতাছি। ফলন ভালাই হইছে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিদ্যুত মজুমদার জানান, জেলার ১০ উপজেলায় চলছে আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াই। মধ্য কার্তিক থেকেই আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, “কৃষি বিভাগ থেকে ৯ হাজার ২০০ কৃষককে ২০৩ মেট্রিক টন বীজ ও সার প্রদান করা হয়। যে সব জমির ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে, সে সব জমিতে ধান কাটতে নেমে পড়েছেন শ্রমিকরা।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, “এবার আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। কৃষকদের সার ও বীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা খুশি।”
এ পর্যন্ত জেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। কৃষকেরা ধান কর্তনে শ্রমিকের পাশাপাশি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহার করছেন।
তিনি আরও বলেন, জেলায় এবার পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। আশা করছি, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে।
জেলার চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক দেশের অন্য জেলার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে আশা ব্যক্ত করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই উপ-পরিচালক।