চিঠিতে সংগঠনের ঐক্য ও শৃঙ্খলার পরিপন্থি কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
Published : 19 Mar 2025, 08:15 PM
বিএনপির কেন্দ্রীয় তিন নেতাকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছে রাজশাহী মহানগর কমিটি। চিঠিতে তাদের সংগঠনের ঐক্য ও শৃঙ্খলার পরিপন্থি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
সোমবার আলাদা চিঠির মাধ্যমে ওই তিন নেতাকে সতর্ক করা হলেও বুধবার বিষয়টি জানাজানি হয়। এ নিয়ে রাজশাহী বিএনপিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, শাখা কমিটির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সতর্ক করে চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে।
সতর্কবার্তা পাওয়া নেতারা হলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং বিএনপির ত্রাণ পুনর্বাসন সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী এশা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে তাদের সতর্ক করা হয়।
শফিকুল হক মিলনকে পাঠানো চিঠিতে করা হয়েছে, দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও রাজশাহী মহানগর বিএনপিকে অগ্রাহ্য করে মহানগরের অধীনস্থ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটিকে বাদ দিয়ে দলীয় ব্যানার ব্যবহার করে কর্মসূচি পালন এবং নিজ খেয়াল খুশি অনুযায়ী সাংগঠনিক পদ পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন; যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।
এমন কর্মকাণ্ড দলের ঐক্য বিনষ্ট এবং দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে; যা বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমতাবস্থায় সংগঠনের ঐক্য ও শৃঙ্খলার স্বার্থে এমন কর্মকাণ্ড থেকে আপনাকে বিরত থাকতে সতর্ক করা হচ্ছে।
এ ছাড়া মিজানুর রহমান মিনু ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী মহানগরের আওতাধীন ২, ৭, ১৩ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী, যারা দলীয় পদে না থেকেও মহানগর কমিটিকে অমান্য করে দলের নাম ব্যবহার করে বিতর্কিত কর্মসূচি পালন করছেন।
এসব কর্মসূচিতে আপনাদের মত দায়িত্বশীল নেতা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে অংশগ্রহণ করছেন; যা মহানগর বিএনপির ঐক্যে ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে আপনাদের উপস্থিত না থাকা বাঞ্ছনীয়। আপনাদের কাছ থেকে দলীয় শৃঙ্খলা আমরা আশা করছি।
চিঠির বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ বলেন, “এ সব জটিলতা নিরসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামকে দায়িত্ব দেয় বিএনপি। নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করা হয়েছে। তারপরও তাদের কাছে একই আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। ফলে হাই কমান্ডের নির্দেশে চিঠি দিয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “গত বছরের অগাস্টে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে লিখিত দেন মিজানুর রহমান মিনু। তদন্তে সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
“গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী চিঠি দিয়ে মিজানুর রহমান মিনুকে বলেন, ‘আপনি যে অভিযোগটি করেছেন সেটির প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অসত্য প্রতিপন্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সতর্ক করা হইল’।”
কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সতর্ক করা দূরে থাক; যে কোনো বিষয়ে চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার শাখা কমিটির আছে কি-না, সে বিষয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, “তারা যেন মগের মুল্লুক পেয়ে গেছেন। এ বিষয়ে তাদের কাছেই জানতে চান।”
মিজানুর রহমান মিনু বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি আমরা। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতার কোনো চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার মহানগর কমিটির নেই। দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য এসব করছেন তারা। দলের হাই কমান্ড এ বিষয়টি দেখবেন।”
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী এশা বলেন, “২০২১ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির গঠনের পর থেকে তারা (ওই তিন নেতা) বিভিন্নভাবে আমাদের অসহযোগিতা করে আসছেন। যার কারণে বিভিন্ন সময় মহানগর বিএনপি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আলাদা কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। এতে দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।
“এ কারণে কেন্দ্রের নির্দেশিত হয়ে তাদের চিঠি দিয়ে অবগতি করেছি। তারা মানতেও পারেন নাও মানতে পারেন। তারা যদি না মানে তবে আমরা সেটি কেন্দ্রকে জানাব। কেন্দ্র বিষয়টি দেখবে।”