কৃষি বিভাগ জানায়, বারি-১১ জাতের আম অসময়ে হওয়ায় কৃষক দাম ভাল পাচ্ছেন।
Published : 25 Mar 2023, 06:01 PM
যশোরের শার্শা উপজেলায় বারি-১১ জাতের ‘বারোমাসি’ আম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এক কৃষক। অসময়ে বাজারে ওঠা এই আমের চাহিদাও ভালো। প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত নতুন জাতের এই আম চাষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে বলে জানিয়েছেন বাগআঁচড়া ইউনিয়নের পিঁপড়াগাছী গ্রামের নুর ইসলাম সরদার।
তিনি জানান, সাধারণত হিমসাগর, ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আমের দেশ-বিদেশে চাহিদা রয়েছে। এসব আম এক মৌসুমী হওয়ায় সারা বছর পাওয়া যায় না। তবে নতুন জাতের বারি-১১ আমটি সারা বছর পাওয়া যায়।
নূর ইসলাম জানান, তিনি ২৩ বছর ধরে নার্সারি কাজের সঙ্গে জড়িত। প্রথমে তিনি অন্যের নার্সারিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পরে নিজের বসতবাড়ির পাশে ফলজ নার্সারি গড়ে তোলেন।
নার্সারির পাশাপাশি আগে থেকেই তার আমের বাগান করার পরিকল্পনা ছিল। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে ২০১৮ সালে তিন বিঘা জমিতে কাটিমন জাতের আমবাগান গড়ে তোলেন।
পরের বছর আরও ছয় বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে সেখানে নতুন জাতের বারি-১১ আমের চারা রোপণ করেন বলে জানান নুর ইসলাম।
তিনি বলেন, “গত বছর প্রায় চার লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এতে তিন লাখ টাকার উপরে লাভ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ আম পাওয়া যায়।
“তিন বিঘা জমিতে বছরে খরচ হয় প্রায় লাখ টাকা। এ বছর এখন পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার টাকার আম এবং এ জাতের আমের কলম (চারা) বিক্রি করেছি ৬০ হাজার টাকার মতো।”
বছরে তিনবার আম পাওয়ার কথা জানিয়ে নুর ইসলাম বলেন, “জানুয়ারি থেকে আম ছিড়তে শুরু করেছি। বাগান থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করছি। প্রতি বিঘায় বছরে এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।”
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, নুর ইসলামের সফলতা দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক এখন বারি-১১ জাতের আম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আম চাষিদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষিবিদ প্রতাপ কুমার মণ্ডল জানান, এ উপজেলায় হিমসাগর, লেংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, আম্রপালি ও মল্লিকা জাতের ৩ হাজার ১৪৪টি আমের বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে দুই হাজারেরও বেশি চাষি অন্তত ৯৫৯ হেক্টর জমিতে আমচাষ করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুন বালা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ উপজেলায় ল্যাংড়া জাতের আম চাষ হয়েছে ১৩২ হেক্টর, হিমসাগর ৪২০ হেক্টর, রুপালি ১৯০ হেক্টর, বারি-৪- ১৫ হেক্টর, কাটিমন ২ হেক্টর এবং অন্যান্য জাতের আম ২০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
“বারি-৪, বারি-১১ এবং কাটিমন জাতের আমগাছ থেকে বছরে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। অসময়ে আম হওয়ায় কৃষক দামও ভাল পাচ্ছেন; তাই অনেকেই এই জাতের আম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মণ্ডল বলেন, বারি-১১ জাতের আমের স্বাদ ভালো। অসময়ে এই আম বাজারে আসায় চাষিরা ভাল দাম পাচ্ছেন। নতুন কেউ বাগান করার পরিকল্পনা করলে কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ আম গাছ বাসার ছাদেও লাগানো যায়।