“কারখানা মালিক বন্ধ করে দিতেই পারেন কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
Published : 17 Feb 2025, 03:36 PM
শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, মামলা প্রত্যাহার ঘোষণাসহ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
সোমবার সকাল ১০টা থেকে শহরের চাষাঢ়া মোড়ে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক ও বঙ্গবন্ধু সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও দুটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
এতে পুরো শহর যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় যাবার উদ্দেশ্যে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে ওঠেন সানজিদা রহমান৷ অবরোধের কারণে বাস থেকে নেমে অন্তত দুই কিলোমিটার হেঁটে চাষাঢ়ায় এসে বিকল্প বাহন খুঁজছিলেন এ নারী৷
চাষাঢ়া বাসস্টপেজে কথা হয় সানজিদার সঙ্গে। তিনি বলেন, “টিকেট কেটেও হেঁটে আসলাম৷ এখন আবার এখানে কোনো বাস পাচ্ছি না৷ কারণ সবগুলো বাসই জ্যামে আটকে আছে৷ আমার জরুরি কাজ ঢাকায়৷ দেখি অন্য কোনো গাড়িতে যেতে হবে৷”
দুই ঘণ্টা ধরে অবরোধে আটকে থাকা ট্রাক চালক মো. রাজু বলেন, “ইঞ্জিন বন্ধ কইরা বসে আছি৷ গেছে দুই ঘন্টায় এক ইঞ্চিও নড়াতে পারি নাই৷ আমরা তো গাড়ির শ্রমিক, শত শত গাড়ি এখানে আটকে আছে৷ সময়মতো পৌঁছাইতে না পারলে আমাদেরও বকা শুনতে হয়৷ যারা অবরোধ করতাছে, তাগো তো এগুলা বোঝা উচিত৷”
বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফতুল্লার নয়ামাটি এলাকার ইউরোটেক্স নিটওয়্যার লিমিটেড নামে কারখানাটিতে গত কয়েক মাস ধরে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে৷ গত ১০ ফেব্রুয়ারি বকেয়া বেতন ও ন্যায্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে কারখানার ভেতর বিক্ষোভ করেন একদল শ্রমিক৷
পরে আন্দোলনরত কয়েকজন শ্রমিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করে মালিকপক্ষ৷ রোববার শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ সাঁটানো হয়৷ রাতে আন্দোলনরত কয়েকজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে একটি মামলাও হয়েছে। এরই প্রতিবাদে শ্রমিকরা সড়কে নেমেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কয়েকশ’ শ্রমিক চাষাঢ়ায় জড়ো হন৷ পরে তারা চাষাঢ়া মোড়ে অবস্থান নিলে আশেপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ জেলা ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাদের সড়ক ছেড়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধানের প্রস্তাব দিলেও, তা প্রত্যাখ্যান করেন তারা।
অবরোধে অংশ নেওয়া ইউরোটেক্স নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে প্রিন্ট সেকশনের ২৭ জন শ্রমিককে বেতন না দিয়ে ছাঁটাই করা হয়। তাদের নামে কোটি টাকার মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়৷ তারওপর গার্মেন্টস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদে আজকে রাস্তায় নেমেছি৷”
তিনি বলেন, “কারখানা মালিক বন্ধ করে দিতেই পারেন কিন্তু তার আগে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতে হবে৷ যতক্ষণ না কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে একমত হবে ততক্ষণ আমরা অবরোধ চালিয়ে যাব।” যোগ করেন ওই শ্রমিক৷
সকালে কারখানার সামনে অবস্থান নিতে চাইলে মালিকপক্ষের ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ শ্রমিকদের ওপর চড়াও হন বলেও অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা৷
শাহজাহান নামে এক শ্রমিক বলেন, “গার্মেন্টসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ এনেছে৷ আমাদের নামে ভাঙচুরের অভিযোগ এনেছে৷ কিন্তু গার্মেন্টসে কোনো ভাঙচুরের আলামত নেই। ছাঁটাই শ্রমিকদের পাওনা বেতন এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই।”
এদিকে বেলা দেড়টার দিকে পুলিশের একটি দল শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। পরে মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে যান৷
শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলে বেলা দুইটার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়৷
ঘটনাস্থলে থাকা ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরীফুল ইসলাম বলেন, “মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। পরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়াসহ মামলা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছে। এখন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে৷”