এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ অংশের ছয় জায়গায় যানজট তৈরি হয়ে ভোগান্তির শঙ্কার কথা বলেছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
Published : 26 Mar 2025, 08:56 AM
ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতুর অভিমুখে মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ছয় স্থান এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছয় জায়গায় যানজট তৈরি হয়ে ভোগান্তির শঙ্কার কথা বলেছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
পাশাপাশি পদ্মা, ধলেশ্বরী ও মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় টোল আদায়ে দেরি হলেও তার প্রভাবে যানজট তৈরির শঙ্কা রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই পদ্মা সেতু ঘিরে বদলে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা। তবে এখনও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা ঘিরে লম্বা লাইনে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
দুর্ভোগ লাঘবে প্রস্তুতির কথা জানিয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ (টোল, ব্রিজ অ্যান্ড বিইএফ) বলেছেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষকে নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে টোল প্লাজার সবকটি অর্থাৎ দুই পারের ১৭টি লেনই সচল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তের আটটি লেনের মধ্যে একটি মোটরসাইকেলের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তবে চাপ বাড়লে আরও একটি লেন তাৎক্ষণিকভাবে মোটরসাইকেলর জন্য বাড়ানো হবে। ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলের চাপ এমনিতেই অনেক বেশি থাকে।
প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, “দক্ষিণাঞ্চল থেকেও অনেকে রাজধানীতে আসছেন ঈদ করতে। এজন্য জাজিরা প্রান্তও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই প্রান্তের নয়টি লেনের মধ্যে দুটি লেন মোটরসাইকেলের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।”
দ্রুত ও সহজে টোল আদায়ের লক্ষ্যে বুথগুলোতে পর্যাপ্ত ভাংতি টাকা রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি জানান, দুই প্রান্তে একটি করে দুটি লেন ইলেকট্রিক টোল কালেকশন সিস্টেম-ইটিসিএস জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। যেহেতেু এই বুথে ম্যানুয়ালি টাকা আদায়ের সুযোগ নেই; তাই পাইলটিংয়ে থাকা এই পদ্ধতিতে ইটিসিএস টেক লাগানো যানই পারাপার হতে পারবে। চলন্ত যানে টোল আদায়ের এই পদ্ধতি সবার জন্য উন্মুক্ত করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে দুটি রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেতু এলাকায় চারটি পেট্রোল কার প্রশিক্ষিত জনবলসহ টহলে থাকবে। দুইপাশেই থাকবে ফায়ার ভেহিকেল।
ঈদযাত্রার শুরু দিনে ২৪ মার্চ পদ্মা সেতু দিয়ে ১৮ হাজার ১১৫টি গাড়ি পারাপার হয়। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পার হয় নয় হাজার ২৮৫টি যান। মোট টোল আদায় হয় দুই কোটি ৪৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫০ টাকা। চাপ বাড়লে গাড়ির সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের ছনবাড়িতে ঈদে ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়তে পারে। এক্সপ্রেসওয়ের এই স্থানে চার লাইন এবং সার্ভিস লেনের নিচ দিয়ে ক্রসিং রোড থাকায় এবং শ্রীনগর উপজেলার সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ সদরের যাতায়াতের পথ হওয়ার কারণে যানজট লেগে থাকে।
শ্রীনগরের দোগাছিতে পদ্মা সেতুর ওজন স্টেশনে যানজট হতে পারে। ট্রাক পরিমাপে সময় লাগার কারণে এই স্থানের যানজটে অন্য গাড়িগুলো যানজটে পড়তে পারে।
পদ্মা সেতুর উত্তর থানার সামনে খানবাড়িতে যানজটে ভোগান্তি হয়। এখানে বিভিন্ন যানবাহন থামে এবং এলোমেলো যাত্রী ওঠানামা করে। এতে এই স্থানে ভোগান্তি লেগেই থাকে। এ ছাড়া শ্রীনগর উপজেলার বেজগাঁওয়ে মাঝে মাঝে যানজট সৃষ্টি হয়।
‘গাড়ি বেলাইনে গেলেই সমস্যা’
এ ছাড়া টোল আদায়ের সময় মুন্সীগঞ্জের প্রবেশমুখে কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরী-১ টোল প্লাজায়ও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।
এ পথে চলাচলকারী বাস চালক হারুন শেখ জানান, এক্সপ্রেসওয়েতে দ্রুতগতির গাড়ির পাশাপাশি কম গতির যানবাহনও যেমন- অটোরিকশা, ইজিবাইক, মিশুক, কার্ভাড ভ্যানও চলে। এতে যানজটের পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটে। কম গতির যানবাহন চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট সড়ক থাকলে ভোগান্তি কমবে।
বাস চালক আপেল মিয়া বলেন, “রাস্তায় যদি পুলিশ ঠিকঠাক থাকে তাইলে ভোগান্তি কমবে। গাড়ি লাইনে থাকলে সমস্যা নাই, বেলাইনে গেলেই সমস্যা।”
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়কে জামালদী, বালুয়াকান্দি, ভাটেরচর, ভবেরচর, মধ্য বাউশিয়া ও পাখির মোড়ে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে। এর মধ্যে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড হয়ে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার মানুষের চলাচল, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা ছাড়া প্রতিদিন স্থানীয় প্রায় ২০ হাজার মানুষের বেশি চলাচল করে। ঈদের সময় এটা কয়েকগুন বেড়ে যায়। এ সময় যানজট ছাড়াও পর্যাপ্ত গাড়ির সংকটে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এ ছাড়া মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতি সেতুর টোল প্লাজাও যানজট দেখা যায়। এসব এলাকা জটমুক্ত রাখার চেষ্টা চলছে।
ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ শওকত হোসেন বলেন, যাত্রী সাধারণ ও যানবাহনে নিরাপত্তার স্বার্থে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের চারটি এবং থানা পুলিশের তিনটি টিম কাজ করছে। মহাসড়কের একাধিক স্ট্যান্ডে হাইওয়ে পুলিশ বক্স রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কে টহল জোরদার করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে নিরাপদে পার করতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি।
ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানিয়েছেন, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ অংশে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভাও হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু এবং কুচিয়ামোড়ার ধলেশ্বরী-১ সেতু টোল পয়ন্টে টোল আদায় দ্রুত সময় করা এবং টোল প্লাজা কেন্দ্র করে যাতে জট তৈরি না হয় সে ব্যাপারেও পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ ছাড়া পদ্মা সেতুর ওজন স্টেশন পয়েন্ট, খানবাড়ি পয়েন্ট, শ্রীনগরের ছনবাড়ি পয়েন্টেও জটলা তৈরি যাতে না হয় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আর এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটারের চেয়ে গতি না বাড়ানোর জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন পয়েন্টে গতি পরিমাপ করে জরিমানা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মলম পার্টিসহ সব রকমের অপরাধ রোধে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কাজ করছে। দুই মহাসড়কে ৪০০ পুলিশ কাজ করছে।
ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে যাত্রী, চালক, পরিবহনকর্মী সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন করতে হবে। ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মোটসাইকেল যাত্রী ও আরোহীর হেলমেট ব্যবহার, গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে জাতীয় মহাসড়ক থেকে প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন-করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঈদের কয়েকদিন আগ থেকেই বন্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়কের টোলপ্লাজায় অতিরিক্ত জনবল নিয়ে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।