এর মধ্যে সোমবার চারজন ও মঙ্গলবার ১৩২ জন আত্মসমর্পণ করেছেন।
Published : 24 Jul 2024, 12:33 AM
হামলা-অগ্নিসংযোগের পর নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই নারীসহ ১৩৬ কয়েদি আত্মসমর্পণ করেছেন।
শুক্রবার কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় নরসিংদী জেলা কারাগারে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৮২৬ আসামি পালিয়ে যায়, লুট হয় ৮৫টি অস্ত্র ও প্রায় আট হাজার গুলি।
এ ঘটনার চারদিন পর মঙ্গলবার আসামিরা তাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণের আবেদন করেন বলে জানান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম।
আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসা কয়েদিরা জানান, শুক্রবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় জেলা কারাগারের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কী হচ্ছিল সেটা তারা ভেতর থেকে জানতে-বুঝতে পারেননি। একপর্যায়ে হামলাকারীরা কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে সবাইকে বের হয়ে যেতে বলছেন। এ সময় অনেকে বের হয়ে যেতে না চাইলে মারধর করা শুরু করে। হামলাকারীরা আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
এতে যেসব কয়েদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তারাও বাইরে যেতে বাধ্য হন বলে জানান আসামিরা। তারা বলেন, এখন যদি তারা আত্মসমর্পণ না করেন তাহলে পালিয়ে যাওয়া, কারাগারে হামলা, লুটপাট, অস্ত্র লুটের মামলায় তারা আসামি হবেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম বলেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা ও দায়রা জজের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি উপরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মত আমরা কয়েদিদের আত্মসমর্পণ নিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আত্মসমর্পণকারী কয়েদিদের মধ্যে জঙ্গি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামি ছিল না। তবে হত্যা, মারামারি, অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন মামলার বিভিন্ন বয়সী সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ও বিচারাধীন মামলার আসামি ছিল। আমারা আশাবাদী বুধবারের মধ্যে বেশিরভাগ আসামি আত্মসমর্পণ করবেন।”
এদিকে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ১৩৬ আসামি আত্মসমর্পণ করেছেন। এর মধ্যে সোমবার চারজন ও মঙ্গলবার ১৩২ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের এখন আশপাশের জেলার কারাগারে পাঠানো হবে। রাখার মত অবস্থা হলে নরসিংদী জেলা কারাগারে নিয়ে আসা হবে।
এ সময় তিনি আরও জানান, জেলা কারাগারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ এবং জেল সুপার কামরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-অগ্নিসংযোগ করে ভেতরে ঢুকে সেলের তালা ভেঙে দিলে নয় ‘জঙ্গি’সহ মোট ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যায়। এ সময় অস্ত্র-গোলাবারুদ ও খাদ্যপণ্য লুট এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে হামলাকারীরা।
প্রাথমিকভাবে কারা কর্তৃপক্ষ ও রক্ষীরা প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও অবস্থা বেগতিক দেখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। একপর্যায়ে তারা জীবন বাঁচাতে কয়েদিদের সঙ্গে মিশে যান। এ সময় যেসব কয়েদি জেল ছেড়ে পালাতে চাননি তাদের মারধরও করা হয়।
শনি ও রোববার কারাগারে গিয়ে হামলার ধ্বংসের চিত্র দেখা যায়। শনিবারও সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। কারাগারের পুরো চত্বরজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ইট-পাটকেল, কারাগারের বিভিন্ন স্থাপনার ভাঙা জিনিসপত্র। কর্তৃপক্ষ বলছিলেন, আগামী এক বছরেও কারাগারটিতে পুরোপুরি বসবাসের উপযোগী করা তোলা যাবে না।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলাকারীরা কারাগার থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও আট হাজারের বেশি গুলি ছিনিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার রাইফেলের এবং শটগানের গুলি রয়েছে এক হাজার ৫০টি।
তবে মঙ্গলবার জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত মোট ৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন কয়েদি। তাদেরকে কারাগারের আশপাশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৩৩টি, এক হাজার গুলি এবং অসংখ্য হাতকড়া উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
আরও পড়ুন: