বিভিন্ন দোকান ও আড়তগুলোতে ভাল মানের এক মণ পাট দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Published : 18 Sep 2024, 10:56 AM
ভরা মৌসুমেও পাট উৎপাদনের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের বাজারে ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত কৃষিপণ্যটির উপস্থিতি চোখে পড়ার মত নয়। তবুও ভালো দাম না পেয়ে চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পাটচাষিদের।
মঙ্গলবার সকালে ফরিদপুরে পাটের বাজার হিসেবে খ্যাত কানাইপুর হাটে ঘুরে দেখা গেছে পাট বেচা-কেনায় মন্দা ভাব।
অল্প কিছু চাষি তাদের পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটাতে কেউ ভ্যানে করে, কেউ মাথায় করে পাট বিক্রয় করতে নিয়ে এসেছেন এই বাজারে। কিন্তু তাদের মুখে নেই হাসি। কারণ তারা যে দোকানেই যাচ্ছে, কষ্টার্জিত কৃষি পণ্যটি বিক্রিতে প্রত্যাশিত মূল্যের সংবাদ নেই ক্রেতাদের কাছে।
অথচ আগে যে কোনো মৌসুমেই হাটের দিন সকালে এই বাজার ভরা থাকত কৃষকের পাটে। সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবার বসা এই হাটে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে পাট কেনাবেচার জন্য।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকান ও আড়তগুলোতে ভাল মানের এক মণ পাট দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কিন্তু বীজ, সার, তেল, ওষুধ আর মজুরির খরচ বেশি হওয়ায় এই দামে পাট বিক্রি করেও লোকসানের মুখে পড়েছেন বেশির ভাগ চাষী।
হতাশ চাষীরা জানান, পাটচাষের বিভিন্ন উপকরণ ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে এক মণ পাট উৎপাদনে তাদের গড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা খরচই হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের শ্রম যুক্ত হলে তা আরও বাড়বে।
এছাড়া খরার কারণে পাট গাছ বড় ও মোটা হতে পারেনি। যে কারণে পাটের আঁশ কম হওয়ায় ফলন অনেক কমে গেছে। তবুও এ অঞ্চলে পাটের মান ভাল হওয়ার তারা ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশা করেছিলেন।
বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা স্থানীয় চাষি মোতালেব মুন্সী, বিল্লাল মাতবার, খলিল মোল্লা জানান, প্রতি বছরের মত এবারও লোকসানের আশঙ্কা নিয়েই নিজেদের চাষযোগ্য সবটুকু জমিতেই পাট বুনেছেন তারা।
কিন্তু এবার পুরো বর্ষাকাল ছিল অনাবৃষ্টি। সে সময় ডিজেল পুড়িয়ে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়েছে, পাট কাটার পর আশপাশের খাল-নালায় পানি না থাকায় জাগ দিতে ভ্যানে করে পাট গাছের আঁটি দূরে নিতে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে।
আবার জাগ দেবার পরও শ্রমিক দিয়ে আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে তার পাশাপাশি পরিবারের সব সদস্য মিলে যে পরিমাণ শ্রম ও সময় ব্যয় করেছেন- সেটা ধান বা মৌসুমের অন্য যে কোনো ফসলের জন্য করলে অনেক লাভ হতো।
তাই আগামী বছর আর পাট চাষ করবেন না বলে জানান এই কৃষকরা।
তাদের মতই জেলার অন্য এলাকার পাট চাষিরাও বলছেন, বর্তমানে যে দরে বাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে তাতে তাদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। উৎপাদন ভালো না হওয়ায় চলমান এই দরে এবার পোষাচ্ছে না তাদের।
কানাইপুর বাজারের অন্যতম পাট ব্যবসায়ী আনন্দ সাহা, চান মিয়া, জলিল শেখ বলেন, ভরা মৌসুমেও বাজারে পাটের জোগান অনেক কম, হাটের দিন যেখানে একজন ব্যবসায়ী পাঁচ থেকে সাত ট্রাক পাট ক্রয় করত, সেখানে দুই থেকে তিন ট্রাক পাট পাওয়াও মুশকিল হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, এ বছর জেলায় ৮৬ হাজার ৫২৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ১৬ হাজার ৬১ টন।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, জেলার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষে উপযোগী হওয়ায় এ অঞ্চলে উন্নত মানের পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। এ বছর উৎপাদন কম হলেও পাটের গুণগতমান যে কোনো জেলার তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “যদিও উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেড়েছে, তবু পাট চাষে আগ্রহ এখনও আছে চাষিদের। সরকার তাদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আসছে, আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি।”