অরুণাংশু দত্ত টিটোর নির্বাচনি সভায় দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
Published : 16 May 2024, 10:28 PM
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে ঠাকুরগাঁও থেকে বিতাড়িত করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট অরুণাংশু দত্ত টিটোর নির্বাচনি সভা থেকে সংসদ সদস্যকে এই হুমকি দিয়েছেন ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
রোববার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ওই নির্বাচনি সভায় তার দেওয়া বক্তব্যের ২ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই ভিডিওতে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের উদ্দেশ্যে কাউন্সিলর আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, “জীবনে তো ভোট করেনি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেনি কারো সঙ্গে। ওই অটোপাস এমপি সবাইকে হুমকি দিয়ে কাউন্সিলরদের বিভ্রান্ত করেছে। ”
“আবার কিছু কাউন্সিলর বাসস্ট্যান্ডে কথা বলেছে। কিন্তু তারা ঠিকই আছে, কোন রকমে বিভ্রান্ত হয়নি। তাদের জোর করে আনা হয়েছে। ওনারা (কাউন্সিলর) এখানে (বাসস্ট্যান্ড এলাকায়) এসে বলছে আমরা আওয়ামী লীগের মূল স্রোতে আছি। ওনারা যদি মূলস্রোত হয়, তাহলে আমরা কোন আওয়ামী লীগ করছি?
তিনি আরও বলেন, “যার বাপ (বাবা) করে জামায়াত, ভাই করে বিএনপি, একাই করে আওয়ামী লীগ, ওনি নাকি মূলস্রোত। আজব কথা। আমরাই মূলস্রোত, মূল আওয়ামী লীগ।”
সংসদ সদস্যকে হুমকি দিয়ে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, ঠাকুরগাঁওয়ে আপনাদের ঠাঁই হবে না। ওই রমেশ সেনকে রুহিয়া থেকে টিটো দত্ত (অরুণাংশু দত্ত) ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে আসছে। আবার বিদায় করে দেব।
“রাত ৩টা বাজলেও টিটো দত্তকে পাওয়া যায়, আর ওনি এমন নেতা কলিংবেল বাজলেও তাকে পাওয়া যায় না।”
তবে এই নির্বাচনি সভায় চেয়ারম্যান প্রার্থী অরুনাংশু দত্ত টিটো দাবি করেন- উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন নিরপেক্ষ অবস্থানেই রয়েছেন।
সভায় তিনি জানান- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে এমপি রমেশ চন্দ্র সেন বলেছেন, ‘চার প্রার্থীই আমাদের দলের, কারও পক্ষে আলাদা কাজ করার সুযোগ নাই।’
এদিকে সংসদ সদস্যকে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে বুধবার আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “মনের ক্ষোভ থেকেই আমি এমপি রমেশের উদ্দেশ্যে বলেছি। তিনি যেভাবে পক্ষপাতিত্ব করছেন তা মোটেও কাম্য নয়। যেহেতু আমরা সবাই একই দলের। তিনি আমাদের অভিভাবক। তিনি কেন পক্ষ নিয়ে কাজ করবেন?”
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, “সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চার জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা সবাই আমাদের দলের। জনগণের ভোটেই যে কোনো একজন চেয়ারম্যান হবে।
“এখানে পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ নেই। কারণ দল থেকেও নির্দেশনা রয়েছে কারও পক্ষ নেওয়া যাবে না। আমি কারও পক্ষও নেইনি। ”
তিনি বলেন, “নির্বাচন যাতে অবাধ-সুষ্ঠু হয়, কেউ যাতে নির্বাচনি সভাগুলোতে ভয় প্রদর্শন করতে না পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে। আর যারা হুমকি-ধামকি দিবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে আহ্বান জানানো হয়েছে।”
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, “সংসদ সদস্যকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৮৫টি।
এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অরুণাংশু দত্ত টিটো (আনারস প্রতীক), সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার (মোটরসাইকেল প্রতীক), সহ-সভাপতি রওশনুল হক তুষার (ঘোড়া প্রতীক) ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান খোকন (কাপ-পিরিচ প্রতীক) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন ও ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নিয়ে গঠিত সদর উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৭ হাজার ১৭৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯০৩, নারী ২ লাখ ৪২ হাজার ২৬৮ ও চার জন তৃতীয় লিঙ্গের।