হযরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (রাঃ) দরবার শরিফের সদস্য বলেন, “যে কোনো মূল্যে ওরশ মাহফিল করব আমরা।”
Published : 26 Jan 2025, 09:56 PM
এবার ময়মনসিংহ সদর উপজেলার একটি মাজারের ওরশ মাহফিল উদযাপনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
উপজেলার ভাবখালী ইউনিয়নের চকবন পাথালিয়া গ্রামের আউলিয়া বাজারে হযরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (রাঃ) দরবার শরিফে এবার ৫০তম বাৎসরিক ওরশ মাহফিলের আয়োজন করে ভক্ত-আশেকনারা। ২৯-৩১ জানুয়ারি এই ওরশ উদযাপন হওয়ার কথা।
আয়োজনকে ‘বিদ-আত ও শিরক’ আখ্যায়িত করে ১৯ জানুয়ারি স্থানীয় কিছু ক্বওমি মাদ্রাসার শিক্ষক, কয়েকজন ইমাম মাজারের কাছে গিয়ে ওরশ বন্ধ রাখতে বলেন। পরে তারা এ ব্যাপারে মানববন্ধনও করেন এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
এই অবস্থার মধ্যেই মাজারের ভক্তরা ওরশ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “ওরশকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হলে দুই পক্ষকে নিয়ে রোববার থানায় আলোচনায় বসা হয়। হুজুরদের দাবি ছিল, গান-বাজনা, জুয়া না হলে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
“গান-বাজনা ও অসামাজিক কার্যকলাপ করবে না মাজারের লোকজন এই প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের নজরদারি রাখা হবে।”
৮ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে একদল মাদ্রাসা ছাত্র থানার সামনের মাজারের বার্ষিক ওরশ শরিফ ও সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় নিরাপদে সরে গিয়ে শিল্পীরা রক্ষা পান।
এরপর রাত ৩টার দিকে আবার এসে তারা মাজারটিকে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় মাজারের এক ভক্ত মামলা করেছেন।
এ ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই আউলিয়া বাজারে হযরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (রাঃ) দরবার শরিফে ওরশ মাহফিল উদযাপন নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে ভক্ত-আশেকানদের মধ্যে।
ময়মনসিংহে মাজার ভাঙার প্রতিবাদে সমাবেশ ঘিরে ১৪৪ ধারা
তারা জানান, শুক্রবার বিকালেও স্থানীয় ভাবখালী বাজারে ওরশ বন্ধের দাবিতে ইত্তেফাকুল উলামা, ভাবখালী ঐক্য উলামা পরিষদ ও স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসুল্লির ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। ওরশ মাহফিল বন্ধের জন্য থানায় অভিযোগও দেওয়া হয় ইত্তেফাকুল উলামার পক্ষ থেকে।
ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে মাজারটির অবস্থান। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাশের জমিতে দোকানপাট ও নাগর দোলা বসানোর প্রস্তুতি চলছে। যেন উৎসবের আমেজ। মাজারের সামনে বড় একটি তোরণ করা হয়েছে, তাতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
শেষ প্রস্তুতি হিসেবে মাজারের কিছু স্থানে রং করছেন কয়েকজন কর্মী। মাজারের ভেতরে কোরআন শরিফ তেলওয়াত করছিলেন একজন ভক্ত।
মাজারটির পাশেই রয়েছে একটি জামে মসজিদ; আর সামনে আছে একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা।
ঢাকা থেকে ভক্ত আহসান হাবীব এসেছেন ভাবখালী বাজারের ওরশ মাহফিলে যোগ দিতে। তিনি বলছিলেন, “৪০ বছর ধরে এই মাজারের মাহফিলে আসি। কিন্তু এবারের মত পরিস্থিতি আর কখনও হয়নি। এখানে অন্যায় কিছু হয় না। কিন্তু অহেতুক ওরশ বন্ধের দাবি করছে একটি উগ্রপক্ষ।”
মাজার কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা মনির উদ্দিন বলেন, “ওরশ উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কাছে ৫ জানুয়ারি লিখিতভাবে আবেদন করা হয়। এত বছর ওরশ উদযাপনে কোনো বাধা আসেনি।
“কিন্তু এবার স্থানীয় কয়েকজন হুজুর শহর থেকে কিছু হুজুর এনে এটি বন্ধ রাখতে বলছে। মাজার ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। যারা এটি পরিচালনার সঙ্গে আছি তারা হুমকির মধ্যে আছি।”
তবে তিনি বলেন, “যে কোনো মূল্যে ওরশ মাহফিল করব আমরা।”
ময়মনসিংহে কাওয়ালি বন্ধের পর ভাঙা হল ২০০ বছরের মাজারটিও, আতঙ্ক
ময়মনসিংহে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর
মাজার কমিটি সদস্য মো. সোহাগ মিয়া বলেন, “আমাদের জানের নিরাপত্তা দরকার। হুজুররা মানববন্ধন করে ওরশ বন্ধ না করলে মাজার ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এখানে শুধু একটি মাজারই নয়, আশপাশে আরও কয়েকটি মাজার রয়েছে।”
মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ফকির বলেন, “৫০ বছর ধরে ওরশটি চলছে। দেশজুড়ে ওরশ হলেও আমাদের নিরীহ পেয়ে ওরশ বন্ধের পাঁয়তারা করছে হুজুররা।”
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাজারের ওরশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন থানার ওসি। মাজার কমিটির লোকজন এবং ইত্তেফাকুল উলামার নেতারা সেখানে ছিলেন।
ইত্তেফাকুল উলামার ভাবখালী ইউনিয়ন কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোবারক হোসেন বলেন, “মাজারকে কেন্দ্র করে ওরশের নাম দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছিল, যা তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। এখানে মাদক, জুয়া ও গানবাজনা হোক এগুলো আমরা চাচ্ছিলাম না। আমরা চাই না, আমাদের সমাজের মানুষ বিপথে চলে যাক। আমরা স্থানীয়ভাবে প্রথমে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি; পরে আমরা প্রশাসনের দারস্থ হয়েছি।
“পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, কোনো গান-বাজনা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা চলবে না। কোনো দোকানপাট বসবে না। শুধুমাত্র জিকির ও কোরআন তেলায়াত করতে পারবে। যদি এর ব্যত্যয় হয় তাহলে আমরা কখনও নিজ হাতে আইন তুলে নেব না। প্রশাসন বিষয়টি মোকাবিলা করবে।”