বরিশাল বিশ্বদ্যালয়ের নিরাপত্তা চাওয়া শিক্ষার্থীকে ‘তুলে নিয়ে নির্যাতন’

খবর পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাকে উদ্ধার করে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2022, 06:06 PM
Updated : 14 August 2022, 06:06 PM

জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা চার শিক্ষার্থীর একজনকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

রাব্বি হাসান রাজ নামের এই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, প্রতিপক্ষের শিক্ষার্থীরা রোববার বেলা ১টার দিকে তাকে ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে দুই ঘণ্টা নির্যাতন করেছেন। খবর পেয়ে প্রক্টর উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম জানান, আহত রাব্বিকে উদ্ধার করে তিনি হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।

রাব্বি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাত ও অমিত হাসান রক্তিমের নেতৃত্বে দুটি পক্ষ ক্যাম্পাসে রয়েছেন। আহত রাব্বি খান রক্তিম সমর্থিত গ্রুপের।

গত ৭ অগাস্ট নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন রাব্বি খানসহ চার শিক্ষার্থী। অপর তিন জন হলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ইরাজ রব্বানী, বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সাব্বির হোসেন এবং রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সাইমুন ইসলাম।

প্রক্টর খোরশেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার শিক্ষার্থীর আবেদন করার পর তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। আবেদনের পর রাব্বিসহ সকলে নিয়মিত ভার্সিটি আসে। কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু রোববার ভার্সিটি থেকে যাওয়ার সময় রাব্বিকে মারধর করেছে।”

খবর পেয়ে রাব্বিকে উদ্ধার করেছেন জানিয়ে প্রক্টর বলেন, তখন রাব্বি চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজনের কথা জানালে তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রক্টর আরও বলেন, “কারা মারধর করেছে সেই বিষয়ে রাব্বির সাথে কোনো কথা হয়নি। বিষয়টি সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।”

রাব্বি হাসান রাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার ১২টায় তার ক্লাস টেস্ট ছিল। প্রক্টরের আশ্বাসে তিনি ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে যান। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে বেলা ১টার দিকে তিনি উপাচার্যের বাসভবনের গেটের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

তিনি বলেন, এ সময় চারজন ‘সন্ত্রাসী’ তাকে ধরে ফেলে। পেছনে আরও ১০-১২ জন ছিল। পরে তাকে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে নাজেমস নামের একটি হোটেলের সামনে নিয়ে যায়।

“সেখানে মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাসহ ৩০-৩৫ জন অপেক্ষা করছিল। সেখানে মহিউদ্দীন এক কর্মীকে হলে তার কক্ষ থেকে বগি দা নিয়ে আসতে নির্দেশ দেয়। দা আনার পর সিফাত নিজে দায়ের কাঠের হাতল দিয়ে আমার বাম পায়ের হাঁটুতে এবং ডান পায়ের হাঁটুর নিচে পেটায়। তার সহযোগীরা মাথা ও পিঠে কিল, ঘুষি মেরে গুরুতর আহত করে।”

এভাবে পৌনে ২ ঘণ্টা আটকে রেখে তার উপর নির্যাতন চালানো হয় বলে রাব্বির অভিযোগ।

রাব্বি আরও বলেন, এ সময় প্রক্টর খবর পেয়ে সিফাতকে ফোন করে কথা বলেন এবং ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু সিফাত অনুরোধ উপেক্ষা করে নির্যাতন অব্যাহত রাখেন।

পরে ২টা ৫১ মিনিটের দিকে প্রক্টর খোরশেদ আলম ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন বলে জানান রাব্বি।

অভিযোগ অস্বীকার করে মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মারধর করায় আঘাত পেয়েছে এমন কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। রাব্বি পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে সুস্থ অবস্থায় বের হয়ে গেছে।”

কেউ এ ধরনের অভিযোগ করলে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে তার দাবি।

আরও পড়ুন:

জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ ছাত্রের আবেদন