চারটি বাসে করে শিক্ষার্থীরা রওয়ানা হলেও ডাকাতি হয়েছে তিনটিতে। প্রধান শিক্ষকের বুদ্ধিমত্তায় একটি বাসে ডাকাতরা উঠতে পারেনি।
Published : 25 Feb 2025, 09:37 PM
নাটোরে শিক্ষা সফরে যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলে ঘাটাইল উপজেলায় ডাকাতির শিকার হয়েছে ময়মনসিংহের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, অভিভাবকরা।
চারটি বাসে করে শিক্ষার্থীরা রওয়ানা হলেও ডাকাতি হয়েছে তিনটিতে। প্রধান শিক্ষকের বুদ্ধিমত্তায় একটি বাসে ডাকাতরা উঠতে পারেনি।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি সড়কের সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষ্মণের বাধা এলাকায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে বলে ঘাটাইল থানার ওসি রকিবুল ইসলাম জানান।
ওই চারটি বাসে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষা সফরের জন্য নাটোরের গ্রিনভ্যালি পার্কে যাচ্ছিলেন।
সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি ঘাটাইল উপজেলার সীমানা ঘেঁষা। সকালেই নাটোর পৌঁছানোর জন্য সোমবার রাত ৩টার দিকে তারা স্কুল থেকে রওয়ানা হন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, “রাতের বেলা রাস্তা খালি পেয়ে বাসগুলি দ্রুতগতিতে চলছিল। হঠাৎ আমরা সড়কের মাঝ বরাবর গাছের গুঁড়ি দেখতে পাই। এটা ডাকাতদের কাজ বুঝতে পেরে দ্রুত সবাইকে সতর্ক করি।
“তাই দ্রুত গাড়ির জানালা ও গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই আমাদের গাড়িটিতে আর ডাকাতরা উঠতে পারেনি।”
তিনি আরও বলেন, তবে অন্য বাসগুলিকে সতর্ক করার আগেই ১০-১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঘাত শুরু করে। ডাকাতরা পেছনের গাড়িগুলো থেকে মালামাল লুট করা শুরু করে।
এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষক দ্রুত জরুরি পরিসেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ততক্ষণে তিনটি বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে মালামাল লুট করে পালিয়ে যায় ডাকাতরা।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, “ডাকাতরা প্রায় দেড় লাখ নগদ টাকা নিয়ে গেছে। এছাড়া দেড় ভরি স্বর্ণ ও ১০টা স্মার্টফোন নিয়ে গেছে।”
ডাকাতদের মারধরে আহত হয়েছেন- ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর সাখাওয়াত হোসাইন রবিন (২৫) ও অভিভাবক শহিদুল্লাহ তালুকদার (৩৯)।
আহত সাখাওয়াত হোসাইন রবিন জানান, তিনি দুই নম্বর গাড়িতে ছিলেন। ওই গাড়িতে শুধু ছাত্রীরা ছিল। ডাকাতরা তার কাছ থেকে মোবাইল নেওয়ার পর যখন ছাত্রীদের দিকে যাচ্ছিল তখন তিনি বাধা দেন। এর ফলে ডাকাতরা তাকে দায়ের উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে।
এছাড়া ডাকাতদের অস্ত্র ও ভয়ংকর রূপ দেখে গাড়িতে জ্ঞান হারান কৃষি বিষয়ের শিক্ষক আবুল কালাম (৫২)।
ডাকাতদের এমন হামলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সিনথিয়া আক্তার বলেন, “ভয়ে আমি অনেক কেঁদেছি। এখনও আমার ভয় দূর হয়নি।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, “এ ঘটনার পর আমরা শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক কাটাতে তাদের নিয়ে নাটোর চলে আসি। ফেরার পথে আমরা থানায় অভিযোগ করে যাব। “
স্থানীয় ইউপি সদস্য লিয়াকত হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যেই লক্ষ্মণের বাধা এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারিও একই স্থানে ডাকাতি হয়েছে।
মালিরচালা গ্রামের লিটন ভূইয়া বলেন, সেদিনও সড়কে গাছ ফেলে একই কায়দায় ডাকাতি হয়েছে। সে ঘটনায় মোটরসাইকেল ও কাঁচামালের ট্রাক আটকে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
ঘাটাইল থানার ওসি রকিবুল ইসলাম বলেন, ডাকাতির খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকার লোকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে।