”কোনো উদ্যোক্তা (এজেন্ট) বা গ্রাহকের গোপন নম্বর ইনপুট দেওয়া ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা স্থানান্তর কোনোভাবেই সম্ভব নয়,” বলছে নগদ।
Published : 04 Jul 2024, 11:35 PM
বরিশাল নগরীতে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি নগদের এক এজেন্ট তার ‘অজ্ঞাতে’ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ‘চলে যাওয়ার’ দাবি নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য বাজারের মিজানুর রহমান নামের ওই নগদ ‘উদ্যোক্তার মত আরও একজন উদ্যোক্তা একই অভিযোগ করেছেন। কয়েকজন গ্রাহকও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে তাদের অজ্ঞাতসারে টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের অভিযোগ করেছেন।
তাদের দাবি, তারা নিজেরা গোপন নম্বর ‘পিন’ দিয়ে টাকা স্থানান্তর না করলেও সেসব লেনদেন সংগঠিত হয়েছে।
তবে নগদ বলেছে, কোনো ‘উদ্যোক্তা’ বা গ্রাহকের গোপন নম্বর ‘ইনপুট’ দেওয়া ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা স্থানান্তর কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানির এজেন্টদেরকে নগদ ’উদ্যোক্তা’ হিসেবে পরিচয় দেয়।
নগরীর মাইশা ট্রেডার্স নামে মোবাইল ব্যাংকিং ও রিচার্জের দোকানের মালিক মিজানুর রহমান গত ২৯ জুন রাতে তার উদ্যোক্তা অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৫ হাজার টাকা তার অজ্ঞাতে চলে যাওয়ার অভিযোগ করেন। তিনটি অ্যাকাউন্টে এসব টাকা স্থানান্তর হয়েছে। তার দাবি, তিনি নিজে গোপন পিন নম্বর কাউকে দেননি।
তার দাবি, “টাকা নেওয়ার পর কোনো এসএমএসও আসেনি। কোনো ফোন কল আসেনি। ওটিপি নম্বর চায়নি। ওই সময় নগদ অ্যাপ কাজ করেনি। ম্যানুয়ালভাবে চেষ্টা করা হয়, তখন পিন ডু নট ম্যাচ উঠেছে। কিন্তু অটোমেটিক আমার অ্যাকাউন্টের টাকা ক্যাশ ইন হয়েছে।
”তখন অ্যাকাউন্ট ব্লক ছিল। কাস্টমার কেয়ার থেকে পুনরায় অ্যাকাউন্ট চালু করে দেয়। কিন্তু টাকা ক্যাশ ইন বিষয়ে কোনো কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।”
পরে ১ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় মিজানুর লিখিত অভিযোগ করেন।
এ থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ”বেশ কয়েকটি অভিযোগ পড়েছে। সঠিক হিসাব এখন বলতে পারব না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।”
মিজানুরের অভিযোগ তদন্তে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাহাতুল ইসলাম বলেন, তিনি অভিযোগটি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
মিজানুরের মত নগরীর ফলপট্টি এলাকার ভাষানচর স্টোরের মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট ও নগদের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন একই প্রক্রিয়ায় ৬০ হাজার টাকা খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করেন।
তার নম্বর থেকে চারটি নম্বরে টাকা স্থানান্তরের ঘটনাও ঘটেছে ২৯ জুন, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নিজে কোনো পিন দেননি। ওই সময়ে কেউ তার ফোন নেয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
ঘটনার পরপর এক ঘণ্টা চেষ্টা করেও কাস্টমার কেয়ারে লাইন পাননি বলে অভিযোগ তার।
এসব বিষয়ে নগদ এর বরিশাল বিভাগীয় প্রধান মো. নাজমুল কোনো বক্তব্যে দিতে চাননি।
পরে নগদের জনসংযোগ বিভাগে জানতে চাওয়া হলে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা চলে যাওয়ার ‘কোনো সুযোগ নেই’ দাবি করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের জন্য অভিযোগকারী উদ্যোক্তাদের নম্বর জানতে চায়।
এসব নম্বর দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে এমএফএস কোম্পানিটি।
তাদের দাবি, ”যতগুলো নম্বর দেওয়া হয়েছে সবগুলো যাচাই বাছাই করে দেখেছে নগদ। কোথাও কোনো গড়মিল পাওয়া যায়নি।”
নগদের ব্যাখ্যা
প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকার সুবিধার ওপর ভর করেই নগদ সব সময়ই নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করে আসার কথা তুলে ধরে কোম্পানিটি বলেছে, কোনো অবস্থাতেই নগদের সিস্টেম থেকে ব্যালান্সের গড়মিল, বিশেষ করে ব্যালেন্স বেড়ে বা কমে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
”আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় অনন্য নজির স্থাপন করে নগদ বরং বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। এমনকি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যাশআউট হওয়া, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যাশইন হওয়া বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেন হওয়ার কোনো রকম কোনো সুযোগ এখানে নেই।”
এসব অভিযোগ দফায় দফায় যাচাইয়ের পর প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যা হয়নি দাবি করে কোম্পানির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “তবে কোনো গ্রাহক অথবা উদ্যোক্তা (এজেন্ট) যদি তার ব্যবসায়িক মোবাইল ফোন কাউকে দেন এবং তখন সেই মোবাইল থেকে লেনদেন হয় অথবা ওটিপি বা পিন নম্বরের নিরাপত্তার বিষয়টি আপোষ করে ফেলেন তখন সে দায় কোনোভাবেই নগদের ওপর বর্তায় না।”
গ্রাহক ও উদ্যোক্তাদের (এজেন্ট) কোম্পানির প্রাণ শক্তি হিসেবে তুলে ধরে নগদ বলেছে, “তাদের অর্থের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের আগ্রাধিকার তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে। গ্রাহকরাও এটি জানেন এবং মানেন।
”তারপরেও দেখা যায় অনেক সময় নিজের ভুলে অথবা লোভের ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিজের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেন।”
অভিযোগ এলে নগদ সব কিছুর আগে তা নিয়ে কাজ করার কথা তুলে ধরে ব্যাখ্যায় বরঅ হয়েছে, “এক্ষেত্রে অভিযোগকারী ব্যক্তি ২৯ জুন ঘটনার কথা বললেও নগদকে এ বিষয়ে অবহিত করেনি। বরং বাইরের কারও প্ররোচণায় গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে এসে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন।”