গাজীপুরে মাদ্রাসায় ছাত্রের মৃত্যু, শিক্ষক গ্রেপ্তার

গাজীপুর মহানগরের ইশায়াতুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামানকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2023, 04:42 PM
Updated : 31 May 2023, 04:42 PM

গাজীপুরে একটি মাদ্রাসায় এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

বুধবার গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকায় ইশায়াতুল কোরআন মাদ্রাসার (আবাসিক) শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।   

মঙ্গলবার বিকালে এই মাদ্রাসা থেকে ১২ বছর বয়সি এই শিশু শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।  

নিহত এই ছাত্রের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার পাতারকান্দি এলাকায়। গাজীপুর নগরীর দক্ষিণ ছায়াবীথি আবাসিক এলাকায় তার পরিবারের সবাই ভাড়া থাকে। তার বাবা দিনমজুর এবং মা বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। 

নিহতের বোন সাংবাদিকদের জানান, তার ভাই প্রতিদিন দুপুরে গোসল করতে বাসায় আসত। রাতে সেখানে থাকত। সকালে ও রাতে তারা বাসা থেকে খাবার দিয়ে আসত। 

“অন্যদিনের মতো মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তাকে মাদ্রাসায় খাবার দিয়ে বাসায় ফিরি।” 

আসার সময় তাকে বেশ হাসিখুসি দেখেন বলে তার বোন জানান। 

তিনি বলেন, দুপুরে খবর আসে তার ভাই ও আরেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষক আসাদুজ্জামান সকালে বেশ মারধর করেছেন। তাদের এক প্রতিবেশীর ভাগ্নেও একই মাদ্রাসায় পড়ে। তারা সাব্বিরের মৃত্যুর খবর পায়। তাদের মাধ্যমে তারা এই মৃত্যুর খবর পান। 

নিহত ছাত্রের বোন আরও বলেন, পরে এক প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে তিনি মাদ্রাসায় গিয়ে ভাইয়ের লাশ গলায় গামছা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তার লাশটি কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। 

মেয়েটি আরও বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষকের কাছে মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন–গলায় গামছা বেঁধে সে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং ’হাতে তার মৃত্যুর জন্য মাদ্রাসার কেউ দায়ী নয়, হুজুরের সঙ্গে বেয়াদবি করলে যেন হুজররা যেন তাকে মাফ করে দেন’–এমন লেখা একটি চিরকুটও ছিল। 

বিষয়টি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানালে সদর থানা পুলিশ মঙ্গলবার বিকালে লাশ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। 

এ ব্যাপারে দুপুরে ওই ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে আসামি সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। 

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রোমান আল মামুন মাথায় আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করে বলেন, “পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত এখনই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব নয়।” 

নিহতের ভগ্নিপতির দাবি, তার শ্যালক আত্মহত্যা করেনি। তার মাথায় ফোলা জখম রয়েছে। আর চিরকুটের লেখাও তার হাতের নয়। তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। 

গাজীপুর নগরীর সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই শিশুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ব্যাপারে বুধবার নিহতের বাবা মামলা দায়ের করার পর মাদ্রাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।