কৃষিজমির মাটি জোর করে ইটভাটায় বিক্রি, ‘নেতৃত্বে’ ছাত্রলীগ নেতা

নরসিংদীর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় প্রতিকার চেয়েও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যানের।

নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2024, 03:29 AM
Updated : 13 March 2024, 03:29 AM

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় জোর করে কৃষকের জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় প্রতিকার চেয়েও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের উল হাই।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষকদের নামমাত্র মূল্য দিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। মাটি বিক্রি করতে রাজি না হলে তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। 

ডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাদিম, তার বড় ভাই শফিকুল ইসলাম হিরণ ও আরিফ মিয়া এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন জমির মালিকরা।

সরজমিনে ডাঙ্গা ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষিজমির মাটি এক্সক্যাভেটর (ভেকু মেশিন) বসিয়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত গর্ত দেখা গেছে। মাটি কেটে ট্রলি দিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।  

ট্রলির চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলো ধুলাবালি ও কাদামাটিতে ভরে গেছে। সড়কে চলাচলে মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

জয়নগর গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান বলেন, এখানে প্রায় ২০-২৫ কৃষকের জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। কিন্তু সবাই কথা বলতে পারছে না ভয়ে বা অন্য কোনো কারণে। এগুলো সব তিন ফসলি জমি। কয়েকজন স্বেচ্ছায়ও মাটি বিক্রি করছেন।    

বোরহান মিয়া নামের আরেক কৃষকের অভিযোগ, জয়নগর গ্রামে তার প্রায় চার বিঘা তিন ফসলি কৃষিজমির মাটি জোর করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগ নেতা নাদিম, তার ভাই শফিকুল ইসলাম হিরণ ও আরিফ মিয়া। তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় একাধিকবার বাধা দিলেও কোনো লাভ হয়নি।

“ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এখনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এতে মাটি সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে,” বলেন তিনি।

একই অভিযোগ করেন শরিফ মিয়া। তিনি বলেন, “তারা শুধু কৃষিজমির মাটিই কেটে নিয়ে যাচ্ছে এমন নয়। আমার দাদি মসজিদের জন্য যে জমি দান করে গেছেন, ওই জমির মাটিও কেটে নিয়ে যাচ্ছে নাদিম, হিরণ ও আরিফসহ মাটি সন্ত্রাসীরা।”

অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাদিম মোবাইল ফোনে বলেন, “এখান থেকে কোনো কৃষকের জমির মাটি কাটা হচ্ছে না।”

যেসব জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে ওইসব জমি নিজেদের বলে দাবি করেন তিনি। 

ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাবের উল হাই বলেন, “ইউনিয়নে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটার কারণেই ফসলি জমির পাশাপাশি রাস্তাঘাটগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। কৃষকরাও তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষার্থে ও ডাঙ্গা ইউনিয়নের পরিবেশ রক্ষার্থে এসব বিষয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বলেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।”

এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কৃষকদের অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “কৃষকের জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। কৃষকরা মামলা করলে উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।”