“কামলার দাম এক হাজার থেকে ১২শ টাকাতে কাজ করছে না তারা। আমরা গরীব কৃষক এত টাকা পামু কই। সারা বছর এই আবাদ দিয়ে চলে আমাগো।”
Published : 22 Jun 2024, 06:58 PM
কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। জেলায় ভারি বৃষ্টি না থাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে কিন্তু এখনো পানিতে নিমজ্জিত আছে ১ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির ফসল। পানি দ্রুত নেমে না গেলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দ্রুত কমছে নদ-নদীর পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
শনিবার বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর পানি কমে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পাউবোর এই প্রকৌশলী বলেন, এ ছাড়া ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের পানি কমলেও এখনও পুরোপুরি নামেনি। পানিবন্দি মানুষ নৌকা এবং ভেলা দিয়ে যোগাযোগ করছে। চরাঞ্চলে পাট, আউশ ধান, চিনা, কাউন, আমনের বীজতলা, বাদামসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি এক সপ্তাহ থেকে পানিতে ডুবে রয়েছে। ফলে এসব ফসলের নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।
নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের ফান্দের চরের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, বানের পানিতে তার পাট এবং সবজিসহ আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। বিশেষ করে আমনের বীজতলা নষ্ট হলে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়বেন তিনি।
একই এলাকার দুলু মিয়া বলেন, তার বাড়ি নিচু এলাকায় হওয়ায় পাঁচদিন হলো পানি উঠেছে। এ কয়দিন থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো মতো রাতদিন কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া বাড়ির আশপাশে লাগানো সব সবজির গাছ মরে গেছে।
রৌমারী উপজেলার সদর, যাদুরচর, দাঁতভাঙ্গা, শৌলমারী ও চরশৌলমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ধান ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় বিশেষ করে বিপদে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা। পাশাপাশি গো খাদ্যের তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে।
ওই পাঁচ ইউনিয়নের বারবান্দা, বেড়ামারা, পাখিউড়া, বোয়ালমারী, নতুন শৌলমারী, চরবোয়লমারী, ডাঙ্গুয়াপাড়া, গুছগ্রাম, ইটালুকান্দা, কাউনিয়ারচর, ছাটকড়াইবাড়ী, ধনতলা, চরধনতলা, শান্তিরচর, ভুদুরচর, নামা বারবান্দা, ইজলামারী, ইছাকুড়ি, পাটাধোয়াপাড়া, চর ইজলামারী, খেওয়ার চর, বকবান্দা, আলগারচর ও পোলারচর প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হেক্টর পাকা ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
রৌমারী উপজেলার বারবান্দা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমাগো পাকা ধান ক্ষেত বৃষ্টির পানিত থলাইয়া (ডুব) গেছে। ধান কাটার কামলা পাওয়া যায় না। এক হাজার থেকে ১২শ টাকাতেও কাজ করছে না তারা। আমরা গরীব কৃষক এত টাকা পামু কই। সারা বছর এই আবাদ দিয়ে চলে আমাগো।”
কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চলতি বন্যায় জেলায় ১ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা শেষে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে।
জেলার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, সব নদ-নদীর পানি কমছে। দুই-একদিনের মধ্যে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এছাড়াও জেলার ৫-৬টি পয়েন্টে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৪৪ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ত্রাণ হিসাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো বিতরণ শুরু হয়েছে।