Published : 03 Apr 2024, 08:49 PM
নতুন বছরকে বরণ করতে মেলার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিগোষ্ঠীগুলোর বৈসাবি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
এ উপলক্ষে বুধবার বিকালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বর্ণিল সাজে বের করা হয় শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চংগ্যা, পাংখোয়া, অহমিয়াসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রাটি রাঙামাটি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়।
পরে সেখানে ফিতা কেটে চার দিন ধরে আয়োজিত মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। এরপর উপস্থিত অতিথিরা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সম্প্রীতি নৃত্য পরিবেশিত হয়।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মেলা।
পার্বত্য জনপদের পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের উৎসব জাতিগোষ্ঠিগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে উদযাপন করে থাকে। উৎসবকে ত্রিপুরারা বৈসু, মারমারা সাংগ্রাই ও চাকমারা বিজু বলে অভিহিত করে থাকে। এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে বৈসাবি নামের উৎপত্তি। এই আয়োজন মূলত অনুষ্ঠিত হবে ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল।
১২ এপ্রিল ফুলবিজু, ১৩ এপ্রিল মূল বিজু বা খাওয়া-দাওয়া পর্ব এবং ১৪ এপ্রিল গইজ্যাপইজ্যা দিন বা বিশ্রামের দিন।
উৎসবকে ঘিরে জেলায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে পালিত হচ্ছে নানান কর্মসূচি। তারই অংশ হিসেবে শোভাযাত্রা, মেলা, ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, “এই বৈসাবি অহিংসার প্রতীক, বন্ধুত্বের প্রতীক এবং মৈত্রীর প্রতীক। পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের মাধ্যমে যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধ হয় এতে পরষ্পরের মধ্যে বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়।”
এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, “বর্তমান সরকার সব সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী উৎসব-পার্বণ যাতে নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “পার্বত্য জেলা রাঙামাটি এখন আর পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়। শিক্ষা-দীক্ষায় ও অবকাঠামো দিকে আমরা এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছি। বর্তমান সরকার এ পার্বত্য অঞ্চলের প্রতি খুবই আন্তরিক।”
রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, “এই মেলার মাধ্যমে আমাদের ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যাতে আরও উন্নত হবে, সংরক্ষিত থাকবে। সবার মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা এই ধরনের অনুষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করছি। সম্প্রীতি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে জেলা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে।”
মেলায় পাহাড়ের নারীদের হাতে ও তাঁতে বোনা কাপড়, ব্যাগসহ নানান হস্তশিল্পের অর্ধশতাধিক স্টল বসেছে।
প্রথম দিন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ছাড়াও সম্প্রীতি নৃত্য, বাঁশখড়ম দৌঁড় প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
চার দিনব্যাপী মেলায় ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পিঠা উৎসব, বিভিন্ন জনজাতির ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মঞ্চ নাটক, পাঁজন রান্না প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ এপ্রিল মেলা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জ্বরতি তঞ্চঙ্গ্যা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোহেল আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, জেলা পরিষদের সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়া উপস্থিত ছিলেন।