স্ত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, “অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় দেখি আমার স্বামীর শ্বাস নাই। মোরা অসহায়।”
Published : 07 Jul 2024, 12:18 AM
বরগুনার আমতলী উপজেলায় অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের পর একটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
শুক্রবার রাতে ঘটনার পর শনিবার উপজেলা সদরের এ কে স্কুল সংলগ্ন ইউনিক স্পেশালাইজড হসপিটাল নামের ওই ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মফেজ মুসল্লির ছেলে মো. আলাউদ্দিন মুসল্লি (৬৫) হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইউনিক স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি হন। অপারেশন বাবদ পরিবার ২৫ হাজার টাকা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে দেয়।
রাত ৮টায় আলাউদ্দিনের অপারেশন করেন মাহবুবুর রহমান কচি নামের একজন চিকিৎসক। তিনি ঢাকার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
রাত ১০টার দিকে আলাউদ্দিনের অবস্থা খারাপ হতে থাকলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে পৌঁছার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ শনিবার সকালে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতলের মর্গে পাঠায়।
আলাউদ্দিন মুসল্লির স্ত্রী কহিনুর বেগম দাবি করেন, অপারেশনের দুই ঘণ্টা পরই তার স্বামী মারা গেছেন। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের সেটা বুঝতে দেয়নি।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, “অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় দেখি আমার স্বামীর শ্বাস নাই। মোরা অসহায়। অরা অপারেশনের নামে মোর স্বামীরে মাইর্যা হালাইছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।”
ঘটনার খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার শনিবার দুপুরে ক্লিনিক পরিদর্শন করেন।
এ সময় দেখা যায়, ক্লিনিকটিতে স্থায়ী কোনো চিকিৎসক নেই। সেখানে থাকা এক ব্যক্তি জানান, যখন রোগী আসে তখন ফোন দিয়ে চিকিৎসক আনা হয়।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতা চিন্ময় হাওলাদার বলেন, “ক্লিনিকের লাইসেন্সসহ সব কাগজপত্র দেখতে চেয়েছি কিন্ত তারা কোনোকিছুই দেখাতে পারেননি। এজন্য ক্লিনিকটি সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি।”
নির্দেশের পরও যদি তারা ক্লিনিক খোলা রাখে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
ইউনিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চেয়ারম্যান রাকিব চৌধুরী রাজু চিকিৎসায় অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অপারেশনের পর রোগী বেশি অসুস্থ হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালীতে পাঠানো হয়। নিয়ে যাওয়ার সময় পথে আলাউদ্দিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।”
অপারেশন করা চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান কচি বলেন, “অপারেশন করার পর রোগী সুস্থ ছিল। কেন মারা গেছে এটা আমি জানি না।”