“ফাইজা নামের ওই শিক্ষার্থী আমাকে বলেছেন- 'যাকে যেখানে খুশি সিট দেব, আপনি কে’,” বলছেন প্রাধ্যক্ষ।
Published : 06 Mar 2023, 11:54 AM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলে নিয়মবহির্ভূতভাবে আসন বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মাহজাবিনের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়ায় ওই ছাত্রলীগ নেত্রী প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমানকে শাসিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে ওই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানাজানি হয় রোববার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ফাইজা মাহজাবিন ওই হলের ২১৮ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে, তবে তার পরিবার থাকে কুমিল্লা শহরের ঝাউতলা এলাকায়।
শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমান জানান, হলের ২১৬ নম্বর কক্ষটি আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রেয়সী সানাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ওই ছাত্রী শনিবার বিকালে ওই কক্ষে উঠতে গিয়ে দেখেন, সেখানে রায়হানা আনজুম নামের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী থাকছেন।
বিষয়টি প্রেয়সী হল প্রাধ্যক্ষকে জানালে তিনি দুজনকে তার কার্যালয়ে ডেকে আনেন। প্রাধ্যক্ষ পদার্থবিজ্ঞানের ওই শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চান- তিনি কীভাবে হলে উঠলেন। তখন ওই ছাত্রী বলেন, হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাকে ওই কক্ষে তুলে দিয়েছেন।
এক পর্যায়ে সেখানে হাজির হন ফাইজা মাহজাবিন। সে সময় তার সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সেই বিবরণ পাওয়া যায় প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমানের কথায়।
“ফাইজা বলে, ‘আমি তাকে তুলেছি। এতে সমস্যা কী?’ তখন আমি এর কারণ জানতে চাইলে ফাইজা বলে, ‘যাকে যেভাবে খুশি সিট দেব, আপনি কে? আমি হল ছাত্রলীগের সভাপতি। হলে আমার কথায় সব চলবে’।”
সে সময় হলের সহকারী প্রাধ্যক্ষ আল-আমিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেত্রীর দুর্ব্যবহারের ঘটনায় তিনি ‘হতবাক’ হয়েছেন।
তবে সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেত্রী কাজী ফাইজা মাহজাবিন।
তিনি বলেন, “সিনিয়র দেখে পদার্থবিজ্ঞানের ওই ছাত্রীকে আমি হলে তুলেছি। তবে আমি কোনো ধরনের অশালীন কথা বলিনি এবং কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করিনি। প্রভোস্ট (প্রাধ্যক্ষ) স্যারকে বলেছি, মেয়েটার সিট দরকার। এজন্য হলে আছে।”
প্রাধ্যক্ষ সাহেদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “হলে কোনো শিক্ষার্থী উঠবেন আর কোনো শিক্ষার্থী উঠবেন না– সেই এখতিয়ার সম্পূর্ণ হল প্রশাসনের। একজন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। অথচ ফাইজা নামের শিক্ষার্থী আমাকে বলেছেন- 'যাকে যেখানে খুশি সিট দেব, আপনি কে?”
ফাইজা নিজেই এখনো হলের ফি জমা দেননি জানিয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, “গত বছরের ৩১ জুলাই শেখ হাসিনা হলের যাত্রা শুরু হয়। এর আগে ২৭ জুলাই যাতায়াত সমস্যা, আর্থিক সমস্যা ও নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে হলে থাকার জন্য আবেদন করে ফাইজা। বর্তমানে হলে ৩৭৯ জন ছাত্রী থাকে। হলের ভর্তি ফি ১ হাজার ২৫০ টাকা। নতুন হলে অনেক সমস্যা থাকবে। ধীরে ধীরে সেগুলোর সমাধান হবে।”
হলের ফি না দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে কাজী ফাইজা মাহজাবিন বলেন, “আমি ফি দিয়েছি। রশিদটা আমার কাছে এখন নেই। তবে একদিন পর প্রমাণ দিতে পারব। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
ফাইজার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, “আমরা যতটুকু জেনেছি- প্রথমে প্রাধ্যক্ষ ফাইজার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। পরে ফাইজা এসব কথা বলেছে। এরপরও শিগগিরই আমরা তাকে নিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে বসব। সেখানে ফাইজার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”