হত্যার কয়েকদিন আগে তার ওপর হামলা ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্বজনরা।
Published : 22 Nov 2023, 09:27 PM
সিলেট নগরীর টিবি গেইট এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ আহমদকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় নিহতের মা আঁখি বেগম বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদ নিপুসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় আগেই আটক হওয়া রনি (২১) ও মামুন মজুমদারকে (২৮) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে আসামিদের নাম প্রকাশ করেননি আজবাহার আলী।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদ নিপু পলাতক আছেন বলে জানান মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার।
গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর বালুচর টিবি গেইট এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ আহমদের (১৯) ওপর হামলা হয়। আহত অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হলে রাত দেড়টার দিকে মারা যান।
কয়েকদিন আগে তার ওপর হামলার অভিযোগে সোমবার তার পরিবার নগর পুলিশের শাহপরাণ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিল।
এদিকে, নিহত আরিফ আহমদকে কুপিয়ে ফেলে যাওয়ার সময় দৌড়ে সেখানে গিয়েছিলেন মা আঁখি বেগম।
আঁখি বেগম গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, ঘটনার পরপরই তিনি সেখানে যান। তখন সাদা পাঞ্জাবি পরা কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদ নিপুকে ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেলে উঠে চলে যেতে দেখেন।
পরে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় ছেলেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তোলে হাসপাতালের পথে রওনা হন।
আঁখি বেগমের দাবি, যাওয়ার পথে ছেলে তাকে বলেছেন, হিরণ মাহমুদ, রনি, মামুন, হেলালসহ ১৫-২০ জন মিলে তার ওপর হামলা চালিয়েছেন।
কয়েক দিন আগের হামলার ঘটনা উল্লেখ করে আরিফের মায়ের দাবি, “আরিফের বন্ধুর সঙ্গে অন্যদের পূর্ববিরোধ ছিল। বন্ধুদের না পেয়ে আরিফের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় আরিফের বাঁ হাতের আঙুল কেটে গিয়েছিল। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর এ ঘটনায় সোমবার শাহপরাণ থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলেকে খুন করা হয়েছে।”
হিরণ মাহমুদ নিপু নেতৃত্বেই আরিফকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের।
ঘটনার পর থেকেই নিপুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত সোমবার রাতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, “আরিফ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। চার-পাঁচদিন আগে আরিফের ওপর হামলা করেছিল এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সোমবার বিকালে আরিফ হামলার ঘটনায় নগরীর শাহপরাণ থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। এ ঘটনার জেরেই তার ওপর হামলা চালানো হয়।”
এ হত্যাকে পরিকল্পিত দাবি করে নাজমুল বলেন, “আরিফের শরীরে ১৬-১৭টি কোপ ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পরবর্তী কর্মসূচি জানাবে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ।”
মঙ্গলবার বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শামসুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আরিফের দুই পায়ের উরুর পেছনের দিকে, গোড়ালিতে ও হাতে এসব আঘাত লেগেছে। নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হবে।”
এ বিষয়ে বুধবার রাতে শাহপরাণ থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।