ঘটনার প্রতিবাদ করায় মারা যাওয়ার রোগীর স্বজনদের মারধর করার অভিযোগও উঠেছে।
Published : 19 Jan 2025, 11:45 PM
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত ওয়ার্ড বয়দের হেনস্তায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ এসেছে।
রোববার সকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে বলে মারা যাওয়া রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবি করেছেন। এছাড়া রোগীর স্বজনদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।
মারা যাওয়া স্বপ্না বালা (৩২) জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের বিশোরীকান্দি গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ বালার মেয়ে ও মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া গ্রামের রমেন হালদারের স্ত্রী।
দুই সন্তানের জননী অসুস্থ্য স্বপ্নাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন তার মা মিনি বালা দাস।
স্বজনরা বলেন, শনিবার স্বপ্না বালার বুকের ব্যথার জন্য রাত ৯টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। হাসপাতলের চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন।
স্বজনদের অভিযোগ, রোববার সকালে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় আনোয়ার মোল্যা ও সমেস মিয়া এসে তাদের কাছে ৫০০ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় টানা-হেঁচরা করে অন্য একটি বেডে নিয়ে রোগীকে রাখা হয়।
তখন তার হাতে লাগানো ক্যানুলা দিয়ে রক্ত উঠে যায়। তাছাড়া অক্সিজেন মাস্ক ঠিকমত লাগিয়ে না দেওয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান স্বপ্না বালা।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে রোগীর স্বজনদের কিল-ঘুষি মারার অভিযোগও উঠে ওই দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
স্বপ্না বালার স্বামী রমেন হালদার বলেন, “সকালে হাসপাতালের দুই কর্মচারী এসে ৫০০ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় জোর করে অন্য একটি বেডে দিয়ে যায় রোগীকে। তখন তার ক্যানুলা দিয়ে রক্ত উঠে যায় এবং অক্সিজেন মাস্কও ঠিকমত লাগিয়ে দেওয়া হয়নি। ওই সময় স্বপ্না বলছিল, তার বুকে বেশি ব্যথা হচ্ছে। এর দুই মিনিটের মধ্যেই সে মারা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “ওই সময় আমার শ্যালক আকাশ ও মামাশ্বশুর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তাদের জামার কলার ধরে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে কিল-ঘুষি দেওয়া হয়। আমি এসবের বিচার চাই।”
হাসপাতালের পরিচালক হুমায়ূন কবীরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন অভিমান্ন নামে মারা যাওয়া রোগীর এক স্বজন।
হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের মরদেহের পাশে বসে আহাজারি করছেন মা মিনি বালা।
এ সময় তার সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে জড়িতদের বিচার চান তিনি।
কান্নারত মিনি বালা বলেন, “আমার মেয়েকে ঠাস করে এনে এই বেডে ফেলে দিয়ে যায়। তখন আমার ছেলেকেও টেনে নিয়ে মারে ওরা। আমার বুকের সন্তানকে কেড়ে নিয়ে গেছে দুইড্যা লোক। ওদের বিচার না হলে ওরা আরও মায়ের বুক খালি করে দিবে।”
হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুমায়ূন কবীর বলেন, “গত রাতে স্বপ্না বালাকে মুমূর্ষু অবস্থায় আনা হয়। তাকে অবজারভেশন বেডে রেখে যথেষ্ট চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমাদের চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি ছিল না।”
তিনি বলেন, “আজ সকালে ওই রোগীকে অবজারভেশন বেড থেকে অন্য একটি বেডে নেওয়া হয়। ওয়ার্ড বয়দের টাকা না দেওয়ায় জোর করে ওই বেডে নেওয়ার পরে রোগী মারা যায় বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন।”
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে, সেই ওয়ার্ড বয় আনোয়ার ও সুইপার সমেস মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওরা দুজন যদি অন্যায় করে থাকে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”