সকাল থেকেই কাশিমপুর কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন কারাবন্দিদের স্বজনরা।
Published : 06 Aug 2024, 04:40 PM
নানা অনিয়ম ও বন্দিদের মারধরের অভিযোগ তুলে মুক্তির দাবিতে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বন্দিরা বিক্ষোভ করার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
বিক্ষোভের সময় বন্দিদের ওপর গুলি ছোঁড়ার অভিযোগ করেছেন ধর্মীয় বক্তা মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম মাদানী।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কয়েকজন বন্দি কারাগারের ভেতরে থাকা কারারক্ষীদের জিম্মি করে বিক্ষোভ শুরু করে। কারারক্ষীরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
এ সময়ে আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করা সেনাবাহিনীর অল্প সংখ্যক সদস্য তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
এর মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেলে দুপুর দেড়টার দিকে হেলিকপ্টারে অতিরিক্ত আরও সেনা সদস্য কারা অভ্যন্তরে এসে বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ করে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই কাশিমপুর কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন বন্দিদের স্বজনরা। তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা যোগ দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
এসময়ে কারাগারের বাহিরে একটি ঝুট গুদামে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে সেনা সদস্যরা বাহিরের বিক্ষোভকারীদেরও ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
এর মধ্যে বেলা পৌনে ১২টার দিকে ধর্মীয় বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও তার লোকজন কারা কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে কারাগারের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন।
পরে তিনি কারা ফটকের ভিতরে গিয়ে সেখানে থাকা সেনা সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন অভিযোগের কথা জানিয়েছেন।
পরে রফিকুল ইসলাম মাদানী কারা ফটকে সাংবাদিকদের বলেন, “বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার সেখানে কারাবন্দি ওলামা-আলেমদের ঠিকমতো খাবার দিচ্ছে না, অযথাই তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং কারারক্ষীদের দিয়ে তাদের লাঠিচার্জ করেন।
“এসময় যখন বন্দিরা উত্তেজিত হয়ে যান তখন সাইরেন বাজিয়ে অস্ত্র নিয়ে বন্দিদের উপর হামলে পড়ে। সোমবার রাত থেকে বন্দিদের কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি।”
এমনকি বন্দিদের উপর গুলিও ছোঁড়ার অভিযোগ করে এতে কয়েকজন আহত হওয়ারও খবর পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া সেনাকর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ শেষে কারাফটক থেকে বেরিয়ে আসার সময় আবারও গুলির শব্দ শুনেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম মাদানী বলেন, সেনা সদস্যরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন। কেউ আহত হয়ে থাকলে তাদের চিকিৎসা ও ভেতরের বন্দিদের প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে কারা কর্মকর্তাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে পৃথক চারটি কারগার রয়েছে।
এর মধ্যে হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জঙ্গী, ফাঁসি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তসহ দুধর্ষ কয়েক হাজার বন্দি রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার অনেক নেতাকর্মীও এ কারাগারে রয়েছে।
এছাড়া কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ ও কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারেও গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামি, ফাঁসির আসামি রয়েছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, “কারাগারের ভেতরে কারাবন্দিদের বিক্ষোভের খবর শুনে কাশিমপুর কারাগার এলাকায় অতিরিক্ত সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
তবে গুলিবর্ষণ ও গুলিবিদ্ধ হয়ে বন্দিদের আহত হওয়ার তথ্য জানতে পারেননি, খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. আবুল ফজল জানান, মঙ্গলবার মাসুম নামের গুলিবিদ্ধ এক কারারক্ষীকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।