সদরের এক প্রার্থী বলছিলেন, “আশা করছি, এখানে আওয়ামী লীগের একক কোনো প্রার্থী থাকবে না।”
Published : 11 Apr 2024, 12:42 AM
কেন্দ্রীয়ভাবে ‘একক প্রার্থী’ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও ‘পাহাড়ের বাস্তবতা বিবেচনায় বিশেষ পরিস্থিতিতে’ রাঙামাটির চারটি উপজেলায় সেই পথেই হাঁটছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
ভোটে লড়াইয়ে ইচ্ছুক নেতাদের ‘বিরোধিতার মুখে’ বাকি ছয়টির ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি জেলা কমিটি।
মঙ্গলবার বিকালে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর।
তিনি বলছিলেন, “আপাতত কাউখালী, বরকল, বিলাইছড়ি এবং রাজস্থলীতে আমরা একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি।
“কাউখালীতে বর্তমান চেয়ারম্যান সামসুদ্দোহা চৌধুরী, রাজস্থলীতে বর্তমান চেয়ারম্যান উবাচ মারমা, বরকলে সাবেক চেয়ারম্যান সন্তোষ চাকমা এবং বিলাইছড়িতে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য অভিলাষ তংচঙ্গ্যা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।”
এই চার উপজেলাতেই পাহাড়ের প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) শক্ত অবস্থান আছে।
এর মধ্যে বরকলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিধান চাকমা এবং বিলাইছড়ির চেয়ারম্যান বীরত্তোম তংচঙ্গ্যা জেএসএস সমর্থিত।
পুনরায় দলের সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুদ্দোহা চৌধুরী বলেন, “অবশ্যই দলের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়াটা আমাদের জন্য সম্মানের, কৃতজ্ঞতার এবং ভালোবাসার অর্জন। গতবার যেভাবে আমরা সরাসরি দলীয় মনোনয়নে ও প্রতীকে নির্বাচন করেছি, এবার তা না থাকায় এমনিতেই চ্যালেঞ্জ আছে।
“তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতায় দলের এই সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই আমাদের কাজে আসবে। কারণ, দলীয় সমর্থন ও সহযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।”
কাউখালীতে দলের নেতা আর কেউ নির্বাচন করতে চেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সামসুদ্দোহা বলেন, “হ্যাঁ, প্রার্থী ছিলো। আমরা আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিয়েছি।”
এদিকে রাঙামাটির অন্য ছয় উপজেলায় দলীয় অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে মুছা মাতব্বর বলেন, “এখনও তো সময় আছে, প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্তই সময় থাকে। দেখা যাক। আমরা সব প্রার্থীর সঙ্গেই কথা বলব, চেষ্টা করব দলীয় একক প্রার্থী রাখার।”
দলীয় ‘কোন্দল সামাল দিতে’আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘একক’ প্রার্থী দেওয়ার দাবি করলেও বিএনপিবিহীন ভোট ‘জমাতে’ সে পথে যায়নি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
তবে ‘নানা বিবেচনায়’পাহাড়ে তার ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে এমন আভাস মিলেছিল।
যেহেতু পার্বত্য তিন জেলায় আঞ্চলিক দলগুলো নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে, ফলে স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, সেখানে নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত করে না দিয়ে, ‘আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একক প্রার্থী’ দেওয়াই সমীচীন।
পার্বত্য তিন জেলার নেতারা দাবি করেছিলেন, তারা ‘বিরাজমান বাস্তবতায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে’ এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন এবং ‘মৌখিক অনুমতি’ও পেয়েছেন।
তারপরই চার উপজেলায় একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিল রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ।
বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচরে কী হবে
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাঁচটিতে জয়ী হয়েছিল। বাকি পাঁচটির মধ্যে তিনটি জেএসএস-সন্তু লারমা, দুটি জেএসএস-এমএন লারমা সমর্থিতরা জয়ী হয়েছিলেন।
পাহাড়ের রাজনীতিতে জেএসএস-এমএন লারমা ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দল দুটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘সুসম্পর্ক’ রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। বিগত নির্বাচনে বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ছিল না। দুই উপজেলাতেই জিতেছিল জেএসএস-এমএন লারমার সমর্থিত প্রার্থী।
তবে বিগত পাঁচ বছরে বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সংগঠনের শক্তি অনেকটাই বেড়েছে। ফলে এবার সেখানে দলটির নেতারা নির্বাচনে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
ফলে শেষ মুহূর্তে যদি এবার এ দুটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
যদিও এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলেছেন, “না, এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। এই দুই উপজেলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি আমরা।”
সদরে চারজন লড়তে চান
রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের মো. শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান। কিন্তু এবার সেখানে যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুজিবুর রহমান দীপুসহ আরও তিনজন ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন। মঙ্গলবারের সভায় দীপু উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার তিনি বলেন, “আমরা দলকে অনুরোধ করেছি সদর উপজেলায় কাউকে একক প্রার্থী না করতে এবং শীর্ষ নেতারা যেন কোনো প্রার্থীর পক্ষে মাঠে না নামেন। নেতারা আমাদের কথায় সম্মতি দিয়েছেন। আশা করছি, এখানে আওয়ামী লীগের একক কোনো প্রার্থী থাকবে না।”
উপজেলা নির্বাচন: পাহাড়ে ‘ভিন্ন কৌশল’ আওয়ামী লীগের
উপজেলা ভোটে আওয়ামী লীগকে খালি মাঠ দেবে না পাহাড়ি দলগুলো
অপরদিকে লংগদু ও কাপ্তাই উপজেলায় গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছিলেন। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানেও একাধিক নেতা ভোটের মাঠে রয়েছেন। ফলে সেখানেও একক প্রার্থী দেওয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
আরেক উপজেলা জুড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়া বরাবরই কঠিন। জনসংহতি সমিতির শক্ত এ ঘাঁটিতে কাকে প্রার্থী করবে আওয়ামী লীগ তা এখনও নিশ্চিত নয়।
যদিও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মাতব্বর বলেন, “আমরা তো জেতার জন্যই প্রার্থী দেব এবং মোটামুটি সব উপজেলাতেই আমাদের প্রার্থী থাকবে।”
কোন ধাপে কোথায় ভোট
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চার ধাপে করতে চায় নির্বাচন কমিশন; প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে।
এরপর ২৩ ও ২৯ মে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ এবং ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট হবে। চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে হবে নির্বাচন।
প্রথম ধাপে ৮ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলাগুলো হলো- রাঙামাটির সদর উপজেলা, কাউখালী, জুরাছড়ি ও বরকল; খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, রামগড় ও মাটিরাঙ্গা; বান্দরবানের সদর উপজেলা, রোয়াংছড়ি, থানছি ও আলীকদম উপজেলা।
দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মে হবে নয় উপজেলায় নির্বাচন। সেগুলো হচ্ছে- খাগড়াছড়ির সদর, দিঘীনালা ও পানছড়ি; রাঙামাটির কাপ্তাই, বিলাইছড়ি ও রাজস্থলি এবং বান্দরবানের রুমা, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা।