২০১৯ সালের মার্চে উপজেলা নির্বাচনের দিন রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে আট খুনের ঘটনা পাঁচ বছর পরও ভোটের আগে পাহাড়ের সহিংসতা আর আতঙ্কের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
Published : 03 Apr 2024, 01:57 AM
নানা আপত্তির কথা তুলে ধরে সংসদ নির্বাচন থেকে দূরে থাকলেও পাঁচ মাসের মাথায় হতে যাওয়া স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে এবারও আগ্রহী হয়ে উঠছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো; ভোট করতে চায় উপজেলায়।
স্থানীয় সরকারে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি এলাকার রাজনীতিতে শক্ত সাংগঠনিক অবস্থার জানান দিতে চারটি আঞ্চলিক দল আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এতে করে ৮ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া উপজেলার ভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বেশ বেগ পেতে হবে বলে ধারণা করছেন পাবর্ত্য তিন জেলার ভোটাররা। এই ভোটে নৌকা প্রতীক না থাকার সুবিধাও কিছুটা এগিয়ে রাখবে স্থানীয় দলগুলোকে বলে মনে করছেন তারা।
মাঠে ঘাটে ভোটের হাওয়া সেভাবে না লাগলেও মাস খানেকের বেশি সময় আগেই দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতির খবর মিলেছে। আগের পদগুলো ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন উপজেলায় জয়ী হওয়ার পরিকল্পনা করছে।
পাহাড়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা), প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন।
দলীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকায় তারা আগের মতোই স্বতন্ত্রভাবে লড়বেন।
প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা, জেএসএস-এমএন লারমার কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ও দলটির মুখপাত্র সুদর্শন চাকমা এবং ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এর প্রধান জলোয়া চাকমা উপজেলার ভোটে তাদের প্রার্থী থাকবে বলে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেছেন।
তবে সন্তু লারমার পিসিজেএসএস এর মুখপাত্রের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেছেন। দলটির বর্তমান এক উপজেলা চেয়ারম্যান ভোট করবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের পাশাপাশি বাকি দুটি পদেও নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছে দলগুলো। সে অনুযায়ী, গণসংযোগসহ নির্বাচনি অন্যান্য কাজ সারছেন বর্তমান পরিষদে থাকা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা।
পাবর্ত্য জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা আঞ্চলিক দলগুলোর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
গত ৭ জানুয়ারির ভোটে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা’ কিংবা ‘একদলীয় অগণতান্ত্রিক নির্বাচন বর্জনের’ আওয়াজ তুলে সংসদ নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছিল এসব দল।
তবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এ তিন পার্বত্য জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি পাহাড়ের এই চার রাজনৈতিক দলের বেশ ভালো সাংগঠনিক শক্তি থাকায় স্থানীয় এ ভোটে তারা খালি মাঠ ছেড়ে দিতে চায় না।
কোন ধাপে কোথায় ভোট
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চার ধাপে করতে চায় নির্বাচন কমিশন; যেটির প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে।
এরপর ২৩ ও ২৯ মে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ এবং ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট হবে। চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে হবে নির্বাচন।
প্রথম ধাপে ৮ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলাগুলো হলো- রাঙামাটির সদর উপজেলা, কাউখালী, জুরাছড়ি ও বরকল; খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, রামগড় ও মাটিরাঙ্গা; বান্দরবানের সদর উপজেলা, রোয়াংছড়ি, থানছি ও আলীকদম উপজেলা।
দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মে হবে নয় উপজেলায় নির্বাচন। সেগুলো হচ্ছে- খাগড়াছড়ির সদর, দিঘীনালা ও পানছড়ি; রাঙামাটির কাপ্তাই, বিলাইছড়ি ও রাজস্থলি এবং বান্দরবানের রুমা, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা।
এখন কে কোথায়
পার্বত্য তিন জেলার ২৭ উপজেলায় এখন আওয়ামী লীগের ১৮ জন, জেএসএস-সন্তু লারমার দলের ৪ জন, জেএসএস-এমএন লারমা দলের ২ জন, ইউপিডিএফের ১ জন এবং বিএনপির ১ জন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদেও পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন দায়িত্ব পালন করছেন। এবারও তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সবশেষ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আছে-রাঙামাটির ১০টির মধ্যে সদর, লংগদু, কাপ্তাই, কাউখালী, রাজস্থলীতে আওয়ামী লীগ।
বিলাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়িতে জেএসএস-সন্তু লারমার দল।
বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচরে জেএসএস-এমএন লারমার দল।
বান্দরবানের সাতটির মধ্যে আলীকদম ছাড়া সবগুলোতে আওয়ামী লীগ।
আলী কদমে বিএনপি সমর্থিত নেতা।
খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে জেএসএস-এমএন লারমা।
পানছড়িতে ইউপিডিএফ সমর্থিত নেতা।
বাকি সাতটিতে আওয়ামী লীগ।
আরও কারা থাকছে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান চার আঞ্চলিক দলের বাইরে তিন পার্বত্য জেলায় আরও সক্রিয় রয়েছে দুই সশস্ত্র আঞ্চলিক দল কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ; যা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত এবং ‘মগ পার্টি’। তবে নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণের ইতিহাস নেই এ দুই দলের। তবে কোথাও কোথাও ভোটের সময় তাদের প্রভাব রয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মতো বিএনপি এখনও সব ধরনের ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকছে। এতে দলটির সরাসরি অংশগ্রহণ না থাকলেও কোথাও কোথাও এ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আলোচনা রয়েছে।
তবে ভোটে জাতীয় পার্টি ও জামায়াত নেতারা থাকছেন, এমন আভাসও মিলছে।
ভোট জমবে?
পাহাড়ের শক্তিশালী এই চার দল নির্বাচনে না আসায় পার্বত্য তিনটি সংসদীয় আসনে ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। ছিল না কোনো ধরনের উত্তেজনাও। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিতেও এর প্রভাব পড়েছিল।
তবে নির্বাচন কমিশন আশা করছে, এবারের উপজেলা নির্বাচন সংসদের চেয়ে ভালো ভোটার টানতে সক্ষম হবে। ফলে কেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়বে।
বিএনপির বর্জনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বেশ কিছু আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট জমিয়ে ফেলার পর ক্ষমতাসীন দল স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে টানতে চেষ্টা করছে।
এর অংশ হিসেবে গত ২২ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দল উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কোনো প্রার্থী পাবেন না দলের সমর্থন।
এতে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো পাবর্ত্য উপজেলাগুলোতেও আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা ভোটকে জমিয়ে তুলবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ভোটের তথ্য
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য তিন জেলায় মোট ভোটার প্রায় ১২ লাখ ৭৮ হাজার।
রাঙামাটিতে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫৪ জন।
খাগড়াছড়িতে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪১৯ জন।
বান্দরবানে ২ লাখ ৮৮ হাজার ২৯ জন।
তাদের প্রায় অর্ধেক পাহাড়ে বসবাসরত ১৩টি নৃগোষ্ঠীর সদস্য।
কী বলছেন নেতারা
পাহাড়ে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আঞ্চলিক চারটি দলের মধ্যে জেএসএস-এমএন লারমা ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। তাদের নির্বাচন সরকারি দলকে খুব একটা বেকায়দায় না ফেললেও বাকি দুটি দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ক্ষমতাসীন দলকে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারে।
তারা এও বলছিলেন, জেএসএস-সন্তু লারমা ও ইউপিডিএফের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তাদের কোনো ‘বিদ্রোহী’ থাকবে না। কিন্তু অনেক উপজেলায় কয়েকজন করে আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের সবাই নির্বাচনের মাঠে থাকলে তার সুযোগ অন্যরা পেতে পারেন।
ফলে এখন যেসব জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতারা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন, সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বর বলেন, “আঞ্চলিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে তাদের আসা না আসা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। যদি তারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতে না পারে, তবে জনগণ বিপুল ভোটে আমাদের দলের নেতাদেরই বিজয়ী করবেন।
“কারণ, গত ১৫ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যে বিপুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে তার পুরষ্কার জনগণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও দেবে বলে আমার বিশ্বাস।”
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কথা বলার জন্য জেএসএস-সন্তু লারমার সংগঠনের মুখপাত্রদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
সংগঠনটির একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করে রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হ্যাঁ, আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেশ কয়েকটি উপজেলায় আমরা নির্বাচন করব এবং আমাদের সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করবেন।”
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট করলে তার দল বেশ কয়েকটি উপজেলায় জয়ী হবে বলে তার আশা।
তবে এ দলের সমর্থনে নির্বাচিত বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেছেন, এখনও দল থেকে কিছু জানানো হয়নি।
“তবে আমি মানসিকভাবে ভোটের জন্য প্রস্তুত। যদি সার্বিক পরিস্থিতি, ভোটের পরিবেশ অনুকূল থাকে এবং অন্যান্য সব দল নির্বাচনে আসে তবে নিশ্চয়ই নির্বাচনে আমরাও অংশ নেব।”
জেএসএস-এমএন লারমার সমর্থনে নির্বাচন করে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন প্রগতি চাকমা। এবারও তিনি ভোটে থাকবেন।
তবে তিনি বলছিলেন, “এবার আমি জনগণের সমর্থনেই নির্বাচন করব। কোনো দলের সমর্থনে নয়।”
জেএসএস-এমএন লারমা কিংবা ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক কারও সমর্থন নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে প্রগতি চাকমা বলেন, “আমি জনগণের প্রার্থী, জনগণের সমর্থনে, জনগণের ভোটেই আবার নির্বাচিত হওয়ার আশা রাখছি।”
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা বলছিলেন, “একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে সব নির্বাচনেই তো আমাদের অংশ নেওয়ার কথা এবং আমরা নিতেও চাই। কিন্তু সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে বলেই আমরা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেইনি।
“এবার স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে আমরা অংশ নেব। আমাদের সমর্থিত পাঁচ-সাত জন উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন। আশা করছি, এটা এবার বাড়বে, যদি নির্বাচন সুষ্ঠু ও চাপমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়”, বলেন অংগ্য মারমা।
জেএসএস-এমএন লারমার কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ও দলটির মুখপাত্র সুদর্শন চাকমাও বলছিলেন, তার দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের নেতারা স্বতন্ত্রভাবে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে নির্বাচন করবেন এটা নিশ্চিত। কিন্তু খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সুদর্শন বলেন, “আমরা তো বরাবরই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছি। এবারও অংশ নেব। নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।”
ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এর প্রধান জলোয়া চাকমা বলেন, “অবশ্যই নির্বাচনে আমরা অংশ নেব। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। কোথাও সরাসরি আমাদের প্রার্থী থাকবে। কোথাও কোথাও আমরা নীরবে সমর্থন করব এবং ভূমিকা রাখব।”
রাঙামাটির নানিয়ারচর ও বিলাইছড়ি উপজেলায় সরাসরি প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলেন তিনি।
ভোটে আট খুনের আতঙ্ক
২০১৯ সালের ১৮ মার্চ রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন উপজেলার কংলাক বিদ্যালয়, মাচালং বিদ্যালয় ও বাঘাইহাট বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফল দেওয়ার পর ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে গাড়িতে করে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
তিনটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, পুলিশ এবং আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা বিজিবি পাহারায় তিনটি চাঁদের গাড়িতে করে ফিরছিলেন। পথে নয় কিলো এলাকায় গাড়িবহর লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ‘ব্রাশফায়ার’ চালায় একদল সন্ত্রাসী। এতে দ্বিতীয় গাড়িটি আক্রান্ত হয়।
চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়িটি চালিয়ে বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে গাড়ি থেকে নামানোর পর একে একে মারা যান ছয়জন। পরে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৩৩ জন।
নিহতরা হলেন- প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান আরব, বাঘাইছড়ি কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন (৪০), ভিডিপি সদস্য মো. আল আমিন (১৭), বিলকিস আক্তার (৩০), মিহির কান্তি দত্ত (৩৫), জাহানারা বেগম (৩৭) ও মন্টু চাকমা (৩৫)।
সেবার সন্তু লারমার দল থেকে বের হয়ে যাওয়া জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা সুদর্শন চাকমা বাঘাইছড়িতে উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়াই করছিলেন। আর জেএসএস সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন বড়ঋষি চাকমা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ জাতীয় দলগুলোর কোনো প্রার্থী না থাকার মধ্যে সুদর্শনকে জেতাতে কারচুপির ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে সকালে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বড়ঋষি চাকমা।
তার সঙ্গে সেদিন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমিতা চাকমা, সমীরণ চাকমা ও অমরশান্তি চাকমা।
তারা ভোট বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, ‘ভোট ডাকাতি’র নির্বাচন বাতিল করা না হলে বাঘাইছড়ি উপজেলায় যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারই দায়ী থাকবে।
আর সেদিন রাতেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ভোটের ফলাফলে সুদর্শন চাকমা বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার তিনি ভোটে দাঁড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেএসএস-সন্তু লারমার নেতা বড়ঋষি চাকমাকে আসামি করে একটি মামলা করে। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৪০ থেকে ৫০ জনকে।
আটজনকে হত্যার পরদিন বিলাইছড়ি উপজেলায় আরেকটি হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে একদল বন্দুকধারী।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বান্দরবান প্রতিনিধি উসিথোয়াই মারমা ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি সমীর মল্লিক)
আরও পড়ুন:
বাঘাইছড়িতে নির্বাচনকর্মীদের উপর গুলিবর্ষণ, নিহত ৭