এ ছাড়া অনেকেই আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
Published : 07 Aug 2024, 12:30 AM
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সহিংসতায় ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় ৩৩ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
আন্দোলনকারীরা সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সরকারি ভবন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাসা-কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অনেকেই আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আশুলিয়ায় ফুটওভার ব্রিজের রেলিংয়ে মরদেহ, পুলিশের পোশাক ও রাইফেল ঝুলতে দেখা গেছে।
সোমবার নিহতদের মধ্যে মাছ ব্যবসায়ী রমজান আলী (৪০) ও সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুর মহল্লার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে রফিকুল ইসলামের (৩০) পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নারী ও শিশু হাসপাতাল, হাবিব ক্লিনিক, হ্যাপী জেনারেল হাসপাতাল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮, নারী ও শিশু হাসপাতালে ৩, হাবিব ক্লিনিকে ২, হ্যাপী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে একজনের লাশ রয়েছে। এ ছাড়া আশুলিয়ার বাইপাইলের কাছে ফুটওভার ব্রিজে দুজনের লাশ রয়েছে।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ আলী বলেন, তাদের হাসপাতালে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবাই গুলিবিদ্ধ। এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ রমজান নামে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি বাইপাইলে মাছ বিক্রি করতেন।
গণস্বাস্থ্য সামাজিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক শেখ কবির বলেন, মৃতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় স্বজনরা লাশ নিয়ে গেছে।
আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ বলেন, “আমাদের হাসপাতালে তিনজনকেই মৃত অবস্থায় আনা হয়। তাদের সবারই মাথায় গুলিবিদ্ধ ছিল। এদের মধ্যে দুইজনের লাশ তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছে। একজনের লাশ পরে আছে। থানা পুড়িয়ে দেওয়ায় পুলিশকেও জানানো সম্ভব হচ্ছে না।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় কয়েকশ আন্দোলনকারী সড়ক অবরোধ করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। পরে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে মাছ ব্যবসায়ী রমজান আলী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দুপুরের পরে সাভার বাসস্ট্যান্ড, রেডিও কলোনি ও আশুলিয়ার বাইপাইলে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন।
বিকালে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানার সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশ প্রশাসনকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
একপর্যায়ে হামলাকারীরা ধামরাই উপজেলা, ধামরাই থানা, পৌরসভা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ধামরাই থানায় ১০টির বেশি যানবাহন পুড়েছে। সেখান থেকে পুলিশের রেশন লুট করা হয়। এ অবস্থায় জীবন বাঁচাতে ধামরাই থানার পুলিশ সাধারণ পোশাকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পান।
এ ছাড়া আন্দোলনকারীরা ধামরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে।
সন্ধ্যায় আশুলিয়া থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এর আগে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানমাল রক্ষার্থে গুলি ছুড়ে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা আশুলিয়া থানার পুলিশের কিছু সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
সোমবার বিকাল ৩টায় সাভার থানা রোডে স্লোগান দিতে দিতে কয়েকশ আন্দোলনকারীরা প্রবেশ করে। এ সময় সাভার প্রেসক্লাব ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়। পরে তারা সাভার মডেল থানার দিকে এগিয়ে আসে। থানার একশ গজ সামনে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন এবং রফিকুল নামে এক যুবক ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীরা থানা ও পোস্ট অফিসের ভেতরে ঢোকে আগুন দিয়ে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়। পুলিশের অস্ত্র ও গুলি লুট করে নেয়। অনেকে পুলিশের রাইফেল থানার পুকুরে ফেলতে দেখেছেন। পরে জীবন বাঁচাতে পুলিশ সদস্যরা গুলি করতে করতে গাড়ি নিয়ে নবীনগরের দিকে পালিয়ে যায়। তখন আন্দোলনকারীরা থানার ভিতরে থাকা সব যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সাভার পৌর কমিউনিটি সেন্টারে থাকা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সদের মালামাল, রেশন লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবার বিকালে সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি সাভার মডেল থানার সামনে এসে থামে। সেনা সদস্যরা থানার ভিতরে ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করে চলে যান।
এদিকে, অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীর বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকরুল আলম সমরের হেমায়েতপুরের বাসা, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের ঋষিপাড়া এলাকার রাজ প্যালেস, ইমান্দিপুরে যুবলীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেলের বাসা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের অফিস ও বাসা, সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন আহমেদ টিপুর বাড়িতেও আগুন দেয় ক্ষুব্ধ জনতা।
মঙ্গলবার দিনভর আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।