সবশেষ ২০১৮ সালে কাঁটাতারের পাশে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার জুড়ে দুই বাংলার মিলনমেলা বসেছিল।
Published : 13 Apr 2025, 05:07 PM
সীমান্তে পাসপোর্ট ও ভিসা করতে না পারা সাধারণ মানুষের এক আনন্দের নাম বাংলা নববর্ষ। প্রতিবছর নববর্ষ ঘিরে পঞ্চগড় সীমান্তে কাঁটাতারের কাছে দুই বাংলার মিলনমেলা বসলেও ছয় বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে।
তবে এবার বড় আশা নিয়ে সীমান্তের বাসিন্দারা অপেক্ষায় থাকলেও শেষমুহূর্তে তা বন্ধের কথা জানিয়েছে বিজিবি।
রোববার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়-১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল ইসলাম। ভিন্ন এই আয়োজন বন্ধের পাশাপাশি সীমান্তের কাছে সর্বসাধারণের প্রবেশে নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি।
নববর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে দুই বাংলার মানুষ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে মিলিত হতেন। কাঁটাতারে দাঁড়িয়ে দুই দেশের স্বজনদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতেন তারা। সুখ-দুঃখের গল্প ভাগাভাগির সঙ্গে সামান্য কিছু উপহারও বিনিময় করতেন তারা।
কিন্তু গেল কয়েক বছরের মত এবারও কাঁটাতারের মিলন মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনীসহ (বিএসএফ) দুই দেশের সরকারের নির্দেশ না থাকায় এবারও বসছে না দুই বাংলার এই ভিন্ন আয়োজন।
সবশেষ ২০১৮ সালে পঞ্চগড়ের অমরখানা, শুকানি, মাগুরমারি ও ভূতিপুকুর সীমান্তসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কাঁটাতারের পাশে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার জুড়ে দুই বাংলার মিলনমেলা বসেছিল।
সেই সময় দেখা গেছে, বিশেষ এ দিনে দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ ছুটে যেতের সীমান্তের কাঁটাতারে বেড়ার কাছে। মাঝখানে কাঁটাতারেই একে অন্যের সঙ্গে কথা ও ভাব বিনিময় করতেন তারা। ২০১৯ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় এই মিলনমেলা।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সঙ্গে ভাগ হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষ। বিভক্তির আগ পর্যন্ত পঞ্চগড় ভারতের জলপাইগুড়ির অন্তর্ভুক্ত ছিল। দেশভাগের কারণে দুদেশের বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও দুই দেশের নাগরিকরা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াতের সীমিত সুযোগ পেতেন।
কিন্তু সীমান্ত এলাকায় ভারত কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পর থেকে সে সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অর্থনৈতিক কারণে পাসপোর্ট করতে না পারায় দুই দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় এক যুগ ধরে বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে নববর্ষের দিন কাঁটাতারের দুই পাশে দেখা করার সুযোগ পেতেন তারা।
এতে ক্ষণিকের জন্য হাত বাড়িয়ে কাছে টানার চেষ্টা, কথোপকথন আর খোশগল্পে মেতে উঠতেন হাজারও মানুষ। স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকে আবেগে কেঁদে ফেলতেন, মনের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারতেন। আর একে নাম দেওয়া কাঁটাতারের মিলনমেলা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলারহাট ইউনিয়নের খুনিয়া পাড়া গ্রামের মনজুরুল ইসলামের স্ত্রী লতিফা বেগমের বাড়ি ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার হলদীবাড়ী গ্রামে। তাদের বিয়ে হয়েছে ১৬ বছর আগে। আত্মীয়তার সূত্র ধরে প্রেমের টানে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করেন তিনি। তাদের ১২ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
পরিবারে সচ্ছলতা না থাকায় পাসপোর্ট ও ভিসা করতে পারেননি লতিফা। ছয় বছর আগে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বাবা-মাকে দেখেছেন। এখনও প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ এলে অপেক্ষা করেন মা-বাবা কে এক পলক দেখার। তবে গত কয়েক বছর ধরে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে না পারায় মন ভালো নেই লতিফার।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, “সীমান্তে কাঁটাতারের মিলন মেলা নিয়ে কোনো নির্দেশ পাইনি। তবে এবারও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্তে বসছে না দুই বাংলার মিলনমেলা।”
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলা নববর্ষ একটা ঐতিহ্য। বিগত দিনে নববর্ষকে কেন্দ্র করে অনেকেই পঞ্চগড় সীমান্তের কাছে ছুটে যেতেন ভারতের অভ্যন্তরে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে।
তবে বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর কারণে ২০১৯ সালে দুই বাংলার কাঁটাতারের মিলনমেলা বন্ধ হয়ে যায়; যা এখনো বন্ধ রয়েছে। এরপরও অনেকে বিষয়টি না জেনে উৎসাহ নিয়ে সীমান্তের কাছে ছুটে যান।
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ এবারও বসছে না মিলনমেলা। তবে সীমান্তে নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে বিজিবি। আশা করি সাধারণ মানুষ নববর্ষকে কেন্দ্র করে সীমান্তে ছুটে যাবে না। সেইসঙ্গে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করবেন না।”