“ধারণা করা হচ্ছে, এখানকার স্থাপনাগুলো এক হাজার থেকে বারশ বছর আগের।”
Published : 14 Jan 2024, 06:20 PM
যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় আরও একটি হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। উপজেলার খেদাপাড়া অঞ্চলের ধনপোতা ঢিবিতে খনন কাজ চালিয়ে এসব নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে।
প্রায় দুই দশক আগে উপজেলার ভোজগাতি ইউনিয়নে দমদম পীরের ভিটায় খনন চালিয়েও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান মিলেছিল। তখন প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছিলেন, এসব নিদর্শন লালমাই পাহাড়ের বৌদ্ধ বিহারের সমসাময়িক।
দমদম পীরের খননকাজের সময়ই খেদাপাড়া এলাকার বিরাট রাজার ধনপোতা ঢিবির সন্ধান মেলে বলে জানান খননকাজের দায়িত্বে থাকা বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের কাস্টডিয়ান আরিফুর রহমান ও কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টডিয়ান আল আমিন।
তারা জানান, ২০০৬ সালে মনিরামপুরের দোনার এলাকায় দমদম পীরের ঢিবি খনন করা হয়। তখন এ ধনপোতা ঢিবির সন্ধান মেলে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ধনপোতা ঢিবির খননকাজ শুরু হয়েছে ১০ ডিসেম্বর থেকে। মোট ২০টি কূপ খনন করা হবে। এরই মধ্যে ১০টির মত কূপ খনন করা হয়েছে।
খননকালে পোড়া ইটের বেশ কয়েকটি চওড়া দেয়াল বেরিয়ে এসেছে। প্রাচীন স্থাপনার এই অংশগুলো ছাড়াও পাওয়া গেছে মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, পাথরের টুকরা, বাটি, পশুর হাড় ও পেরেক।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, “ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরতভায়নার দেউল ঢিবির অনেক মিল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানকার স্থাপনাগুলো এক হাজার থেকে বারশ বছর আগের।
“তবে ঢিবিতে পাওয়া স্থাপনা উপাসনালয় নাকি আবাসস্থল সেই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না।”
লাভলী ইয়াসমীন জানান, জানুয়ারি মাসজুড়ে খনন কাজ চলবে। বাকি কূপগুলোর খননকাজ শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
ধনপোতা ঢিবিটির বর্তমান মালিক খেদাপাড়া গ্রামের পঙ্কজ বিশ্বাস। পঙ্কজ বিশ্বাসের কলেজ পড়ুয়া ছেলে প্রতাপ বিশ্বাস জানান, ৫৭ শতক এলাকার ঢিবিটি তাদের ঠাকুর দাদাদের পৈত্রিক সম্পদ। তাদের সাত পুরুষ ওই ঢিবিতে কোনো বসতি দেখেননি। পরিত্যক্ত ঢিবিতে ঝোপঝাড়ে ভরে যায়। আশপাশের বসতির গবাদিপশুর খাদ্য ও রান্নার জ্বালানির জোগান হয় এই বাগান থেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার সরকার বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগে একবার এ ঢিবিটি খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। সেখান থেকে তিনি এক মণ ওজনের একটি পাথর পেয়েছিলেন।
এদিকে বিরাট রাজার ধনপোতা বা গুপ্তধনের ঢিবি খননের খবর জানজানি হলে প্রাচীন নিদর্শন দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে উৎসুক লোকের ভিড় হচ্ছে। আশপাশে হরেক রকমের দোকানও বসেছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজের সঙ্গে যুক্তরা জানাচ্ছেন, আশা করা হচ্ছে, খননে প্রাপ্ত ফলাফল মনিসরামপুরসহ যশোর জেলার আদি ইতিহাস পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবে।
ঐতিহ্যের যশোরে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীনকালের বিভিন্ন সময়ের প্রততাত্ত্বিক নিদর্শন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খৃষ্টীয় ৭-৮ দশকে নির্মিত কেশবপুর উপজেলার ভরতভায়নার ভরত রাজার দেউল, একই উপজেলার মির্জানগরের মোঘল আকবরের সময়ে নির্মিত হাম্মাম খানা, সাগড়দাঁড়ি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈত্রিক বাড়ি, মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে তৈরি শেখপুর জামে মসজিদ, মনিরামপুর উপজেলায় সেনা বা সুলতানি আমলে নির্মিত দমদম পীরের ঢিবি, ঝিকরগাছা উপজেলায় সুলতানি আমলের নিদর্শন কায়েমকোলা মসজিদ, অভয়নগর উপজেলায় খানজাহান আলী মসজিদ, ১১ শিবমন্দির, যশোর শহরের চাঁচড়া শিবমন্দির, হাজি মোহাম্মদ মহসিন ইমামবাড়া। এসব স্থাপনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন সংরক্ষিত।