এক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওই তরুণীর। ওসিসি সেন্টার থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বের হওয়ার সময় তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
Published : 28 Jan 2024, 11:40 PM
ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি থাকা এক তরুণীকে হাসপাতাল চত্বর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার বিকালে ওই তরুণী ও তার মা ওসিসি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বের হওয়ার পর ১০-১৫ জনের একটি দল জোর করে মেয়েটিকে তুলে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলামের।
ওই তরুণী ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন।
ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, এজাজ আহমদ শনিবার রাতে শাহপুরে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন।
পরে রাত ১১টার দিকে তিনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন।
ওই সেন্টার থেকে ছাড়পত্র নিয়ে মায়ের সঙ্গে বের হওয়ার সময় তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে জনতা। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজের চাচাতো ভাই।
পরে তাকে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলামের ভাষ্য। তবে এ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম তাদের হেফাজতে তৌহিদুজ্জামান থাকার বিষয়টি স্বীকার না করে সার্বিক বিষয়ে ডমুরিয়া থানায় যোগাযোগ করতে বলেছেন।
আর ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ বলেন, “এমন কোনো ঘটনাই ঘটে নাই। পুরোটাই সাজানো; আমি কিছুই জানি না। একটি মহল মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”
এ তরুণীকে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার সমন্বয়কারী মোমিনুল জানান, মধ্যরাত পর্যন্ত ওই তরুণীর খোঁজ মেলেনি।
তার দাবি, ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতা যে ব্যক্তিকে আটক করেছিল তাকে সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে প্রভাবশালী মহলের চাপে থানা সহায়তা করছে না। এতে করে ভুক্তভোগী পরিবারটির সবাই আতঙ্কগ্রস্ত।
“এ ঘটনায় পুলিশ প্রভাবিত হয়েছে। সোমবার আদালতে যাব।”
কলেজছাত্রীর ভাইয়ের ভাষ্য, তার বোনের কলেজ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয় পাশাপাশি হওয়ায় তার বোনের সঙ্গে চেয়ারম্যান এজাজের পরিচয় হয়। পরে ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে এজাজ তার বোনকে একাধিকবার ‘ধর্ষণ’ করে।
তার অভিযোগ, “শনিবার রাত ৮টার দিকে এজাজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আমার বোনকে আবারও ধর্ষণ করে। এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। রোববার বিকালে তাকে সেখান থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।”
তবে কে বা কারা বোনকে তুলে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ও ওসিসির ইনচার্জ ডা. সুমন রায় বলছেন, শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ২৮ বছরের এক তরুণী গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে তাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলে রেফার্ড করা হয়। তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ওই রোগী অভিযোগ করেছেন।
তিনি জানান, এরপর এ বিষয়ে ডুমুরিয়া থানাকে অবহিত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। পরে রোববার ৫টার দিকে ওই তরুণী ও তার মা এর ইচ্ছানুযায়ী তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তাদের থানার যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা আদালতে মামলা করতে চান বলে জানিয়েছেন।
ওসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই চিকিৎসক বলেন, এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ডুমুরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসে মেয়েটির জবানবন্দি নিয়েছেন।
এরপর মেয়েকে নিয়ে তার মা ওসিসি সেন্টার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে শুনেছেন আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সুমন রায়।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, “এ ব্যাপারে এখনও কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। ফলে সত্যমিথ্যা কিছুই বলতে পারছি না।”
খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তারা।