রাজবাড়ীতে গুলিতে স্কুল শিক্ষক হত‍্যা: এলাকায় চাপা আতঙ্ক, মামলা হয়নি

তিন দিনের মধ্যে হত‍্যাকারীকে গ্রেপ্তার না করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি সহকর্মী শিক্ষকদের।

রাজবাড়ী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2023, 04:51 AM
Updated : 2 May 2023, 04:51 AM

রাজবাড়ীর পাংশায় দুবৃর্ত্তদের গুলিতে স্কুল শিক্ষককে হত্যার ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলাও দায়ের হয়নি। তবে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকাবাসীদের মধ্যে। 

মঙ্গলবার সকালে পাংশা থানার ডিউটি অফিসার এএসআই মো. মিরু মোল্লাহ জানান, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা  গ্রামে গুলি করে স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমানকে হত‍্যা করে দুবৃর্ত্তরা। 

“প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে স্থানীয় কোন্দলের কারণে এই হত‍্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।” 

নিহত স্কুল শিক্ষক কলিমহর ইউনিয়নের বসা কুষ্টিয়া গ্রামের মো. ইব্রাহীম মণ্ডলের ছেলে।  তিনি পাংশা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি হোসেনডাঙ্গা বাজারে সার, কীটনাশক ও ভূষি মালের ব্যবসা করতেন। 

সরেজমিনে বসাকুষ্টিয়া গ্রামে দেখা যায়, হোসেনডাঙ্গা বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে শ্রী বলাই বিশ্বাসের বাড়ির সামনে হত্যাকাণ্ডের স্থানটি চারপাশে ইট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এখনো আছে জমাট বাঁধা রক্তের দাগ। ওইস্থান থেকে মিজানুর রহমানের বাড়ি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। 

বলাই বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ একটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। এর কিছু সময় পরে আমরাসহ আশপাশের লোকজন এসে দেখি মিজান মাস্টারের লাশ পড়ে আছে। ” 

এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন,  “এ ঘটনায় আমরা খুবই ভয়ে আছি। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না।” 

তিনি আরও বলেন, “মাস্টার খুবই ভালো মানুষ ছিল। কারও সাথে তার শত্রুতা আছে কিনা সেটা জানি না। তবে যারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিচারের দাবি জানাই।” 

স্থানীয় ভ‍্যান চালক আব্দুল লতিফ বলেন, “মিজান মাস্টারের দোকানে কাল (রোববার) হালখাতা ছিল। রাতে বাড়িতে ফেরার সময় তাকে গুলি করে, কিন্তু কারা মারছে তা জানি না। তিনি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন।” 

অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ভয়ে তো আছিই। কখন কার কি হয় সেটা তো বলা যায় না। এলাকার মানুষেরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে।” 

নিহত মিজানুর রহমানের স্ত্রী শাহানারা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার স্বামীর কোনো শত্রু ছিলো না। রাতে দোকানে হালখাতা শেষে বাড়িতে আসছিল। পথে কারা যেন আমার স্বামীকে গুলিকে মেরে ফেলে। আমি তাদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই।” 

এদিকে রোববার রাতে পাংশা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন‍্য রাজবাড়ী মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে পাংশা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ‍্যালয়ে প্রথম জানাযা ও বসাকুষ্টিয়া নিহতের গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাযা শেষে বাদ আসর বসাকুষ্টিয়া কবরস্থানে তার দাফন করা হয়। 

প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন 

শিক্ষক মিজানুর রহমানকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তার সহকর্মীরা। 

সোমবার দুপুরে পাংশা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ‍্যালয়ের সামনে পাংশা ও কালুখালি উপজেলা শিক্ষা কল‍্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। 

মানববন্ধনে এয়াকুব আলী চৌধুরী বিদ‍্যপিঠের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “একজন শিক্ষকের অপমান হলে সব শিক্ষকের সমান অপমান হয়। আজ মিজান স‍্যারকে হত‍্যা করা হয়েছে মানে পাংশা উপজেলার সকল শিক্ষককে হত‍্যা করা হয়েছে। 

এই ঘটনার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, “এই শিক্ষকের হত‍্যার বিচার না হলে সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুধুমাত্র এসএসসি পরীক্ষা চলবে। তাছাড়া কোনো ক্লাস হবে না। যত সময় হত‍্যাকারীকে থানা হাজতে না দেখতে পারবো তত সময় পর্যন্ত আপনারা স্কুল বন্ধ রাখেন। তাহলে আর মানববন্ধন করতে হবে না। তাহলেই বিচার পাবেন। 

“সারাদিন দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করবেন, সাংবাদিক এসে ছবি তুলবে এর দুইদিন পর এই ঘটনা চাপা পড়ে যাবে।” 

হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, “প্রশাসনকে বলতে চাই আগামী তিন দিনের মধ্যে হত‍্যাকারীকে গ্রেপ্তার না করলে আমরা আবারও মানববন্ধন করবো, সেই সাথে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিব।” 

এ সময় শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি ও আখরজানি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক উদয়পুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম, পাংশা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সান্ত্বনা দাস, নুরুজ্জামান মিয়া নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসমত আলী, পাংশা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল হোসেন, জেলা পরিষদের সদস্য সফুরা খাতুন, পাংশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বিশ্বাস, যশাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হোসেন খান। 

হত্যার রহস‍্য দ্রুত উদঘাটনের আশা পুলিশের 

পাংশা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলা না হলেও আমাদের ছায়া ইউনিট এ বিষয়ে কাজ করছে। কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। 

“আশা করছি খুব দ্রুতই হত‍্যার রহস‍্য উৎঘাটন করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।” 

আরও পড়ুন

Also Read: রাজবাড়ীতে স্কুল শিক্ষককে গুলি করে হত্যা