বসন্ত বরণে সাঁওতাল নারীর মাথায় উঠল বাহা ফুলের মালা

“প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবেসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাহা উৎসব পালন করে। এ উৎসবের পূজা-পার্বন করলে সমাজ ও পরিবারের উন্নয়ন হয় বলে তাদের বিশ্বাস।”

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 01:29 PM
Updated : 11 March 2023, 01:29 PM

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে নিজস্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানে বাহা পরবে মেতেছে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষরা।

শনিবার সকালে উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের আদমপুর মিশন সংলগ্ন বুজরুকবেড়া আদিবাসী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বাহা পরব বা বসন্ত উৎসব করেছে সাঁওতাল নারী-পুরুষরা।

‘সাঁওতালদের ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষায় চাই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ব্রিটিশ হাইকমিশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও আইইডির সহযোগিতায় এবং অবলম্বন ও গাইবান্ধা জনউদ্যোগের আয়োজনে এ উৎসব পালন করা হয়।

দিনব্যাপী পূজা-অর্চনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাঁওতাল এবং বাঙালিদের আগমনে মিলনমেলায় পরিণত হয় সাঁওতাল পল্লী। পরে স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠী শিল্পীদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত সাঁওতাল সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।

বাহা পরব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহেদ হাসান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস (আরডিআরএস) বাংলাদেশের কৃষি ও পরিবেশ ইউনিটের প্রধান মোস্তফা নূরুল ইসলাম রেজা, পরিবেশ আন্দোলন গাইবান্ধার আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বাবু, অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, রিপোর্টাস ইউনিটির সহসভাপতি গোলাম রব্বানী মুসা, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু, মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলী রানী দেবী, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, সুচিত্রা মর্মু তৃষ্ণা, জাকব টুডু, থমাস হেমব্রম, মনির হোসেন সুইট।

সাঁওতালরা এদেশের নাগরিক, তাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য এদেশের সংস্কৃতিরই অংশ। সাঁওতালদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় ও সামজিক উদ্যোগ গ্রহণ, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদান ও কালচারাল একাডেমি স্থাপন করার দাবি জানান আলোচকরা।

এ সময় ফিলিমন বাস্কে বলেন, “প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবেসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাহা উৎসব পালন করে। এ উৎসবের পূজা-পার্বন করলে সমাজ ও পরিবারের উন্নয়ন হয়। বাহা পূজা না করা পর্যন্ত সাঁওতাল নারীরা বাহা ফুল অর্থাৎ শাল ফুল ছিঁড়ে মাথায় পরে না। প্রজন্মকে জানাতেই এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ঐতিহ্যবাহী উৎসব হারিয়ে না যায়।”

সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান উৎসব হচ্ছে বাহা পরব। বাহা অর্থ ফুল। বাংলায় বাহা পরবকে ‘ফুল উৎসব’ বলা হয়।

নববর্ষ হিসেবে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করে সাঁওতালরা। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলে সমতলে বসবাসকারী ওঁড়াও, মুণ্ডা, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়ী, রাজওয়ারসীসহ ৩৮টি নৃ-জনগোষ্ঠী এ উৎসব পালন করে থাকে।