আহমদিয়াদের ওপর হামলা সরকারের ‘মদদে’: ফখরুল

“কয়েকদিন আগে থেকেই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িগুলোতে লাল ও সাদা পতাকা লাগিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই চিহ্নিত বাড়িঘরে আক্রমণ করা হয়েছে,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 09:26 AM
Updated : 13 March 2023, 09:26 AM

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলায় সরকারের ‘মদদের’ অভিযোগ এনেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হামলার আগে কয়েকদিন ধরে বাড়িঘরগুলো পতাকা টাঙিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল বলেও তিনি দাবি করেছেন।

আহমদিয়াদের জলসার অনুমতি দিলেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ফখরুল। তার দাবি, বিএনপির আন্দোলন যখন ‘বেগবান হচ্ছে’ তখন জনগণের দৃষ্টি অন্য জায়গায় সরাতে চাইছে সরকার। এর অংশ হিসেবেই এই হামলা হয়।

এখন ‘অপপ্রচার’ করে সরকার বিএনপির উপর দোষ চাপাতে চায় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ এসব অপপ্রচারে বিশ্বাস করে না।”

সোমবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরে নিজ বাসভবনে জেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “হামলার কয়েকদিন আগে থেকেই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িগুলোতে লাল ও সাদা পতাকা লাগিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই চিহ্নিত বাড়িঘরে আক্রমণ করা হয়েছে।

“আপনারা দেখেছেন কীভাবে নির্মমভাবে, অমানবিকভাবে তাদের বাড়িঘরে আক্রমণ হয়েছে, লুটতরাজ হয়েছে এবং ভাঙচুর করা হয়েছে। দুইজন প্রাণ দিয়েছেন; একজনকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আরেকজন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে।”

অনুমতি দিলে নিরাপত্তা নেই কেন?

ফখরুল বলেন, “পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এ ধরনের একটা বিতর্কিত জলসা সেটা করতে সরকার অনুমতি দিয়েছে। অনুমতির পর সরকারের দায়িত্ব ছিল সেই জলসায় ফুল প্রটেকশন দেওয়া; সেই প্রটেকশন কিন্তু সরকার দেয়নি।

“বিএনপি যখন একটা কর্মসূচি ঘোষণা করে, তখন আমাদেরকে প্রটেকশন দেওয়ার কথা বলে হাজার হাজার পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়।”

তিন ঘণ্টা ধরে হামলার সময় কিছু পুলিশ দিলেও তারা ‘নিরব দর্শকের ভূমিকা’ পালন করেছে বলে অভিযোগ বিএনপি মহাসচিব।

উদ্দেশ্য ‘জনতার দৃষ্টি ঘোরানো’

ফখরুল বলেন, “পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের স্টেটমেন্ট দিয়েছেন সেগুলো পত্রপত্রিকায় এসেছে। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে ঘটনাটি হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।

“নির্বাচনের পূর্বে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু করেছে এবং মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এই গণআন্দোলন যখন বেগবান হচ্ছে এবং বিস্ফোরণের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে; তখনই আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায়। একই সঙ্গে সরকার বিএনপির ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে হয়।

“ঘটনা ঘটার পরদিনই তদন্ত ছাড়াই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে ফেললেন এটা বিএনপির লোকেরা করেছে। এটা থেকে বোঝা যায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা পুরোপুরি পরিকল্পিত। এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে তারা বিএনপিকে দোষারোপ করতে চায়।”

ফখরুল বলেন, “হামলার পর সেখানে রেলমন্ত্রী সুজন সাহেব যান, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদেরকে সহানুভূতি জানান। সেখানে আহমদিয়া সম্প্রদায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তারা রেলমন্ত্রীকে পরিস্কার করে বলেন, ‘আপনার আশপাশের লোকজনরাই এ ঘটনায় জড়িত’।

“কয়েকটা নামও বলেছিল আহমদিয়া সম্প্রদায়। তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু কোন মামলা করা হয়নি এবং গ্রেপ্তারও করা হয়নি।”

এ ঘটনায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের অভিযোগেরও জবাব দেন ফখরুল। তিনি বলেন, “তিনি (তথ্যমন্ত্রী) বুঝতে পারেন না তার কথা এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না।

“পঞ্চগড়ে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী আমাদের সাবেক এমপি হারুন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের হারুনুর রশীদ) ও রুমিন ফারহানাকে দায়ী করেছেন; তাদের ফেসবুক আইডি থেকে নাকি এ ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে।

“তথ্যমন্ত্রীর এমন কথা সর্বাত্মক মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। রুমিন ফারহানা ও হারুন সাহেব ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তাদের এ ধরনের কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই; ফেইক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এগুলো করা হয়েছে।

“হারুন ও রুমিন ফারহানা অত্যন্ত দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা। তারা কখনই এই ধরনের পোস্ট করবে ফেইসবুকে, এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনই বিশ্বাস করে না। আমি খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি পঞ্চগড়ের এই ঘটনার সঙ্গে সরকার সরাসরিভাবে জড়িত; তাদের প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ মদদে এ ঘটনা ঘটেছে। এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে।

এই ঘটনায় বিএনপির সমর্থক, নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘অন্যায়ভাবে’ মামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, “১৮০ জনের উপরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পঞ্চগড়ে প্রকৃতপক্ষে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মী, সমর্থকরা কেউ বাসায় থাকতে পারছে না। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশের কারণে।”

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি নুর করিম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।