সমুদ্র সৈকতে দুই মৃত ডলফিন, পুঁতে রাখা হবে বালিয়াড়িতে

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির ডলফিন প্রথমবারের মতো ভেসে এল। এর ওজন ২৪০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2024, 12:12 PM
Updated : 16 Feb 2024, 12:12 PM

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুটি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। এর মধ্যে একটি ‘ইরাবতী’ এবং আরেকটি ‘ইন্দোপ্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক’ প্রজাতির বলে সনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়া উপজেলার ইনানী ও সোনারপাড়া সৈকতে জোয়ারের সঙ্গে মৃত ডলফিন দুটি ভেসে আসে।

তরিকুল বলেন, “জেলেদের কাছে খবর পেয়ে ভেসে আসা মৃত ডলফিন দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। ইনানী সৈকতে আসা ডলফিনটি ‘ইন্দোপ্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক’ প্রজাতির। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এই প্রজাতির ডলফিন প্রথমবারের মতো ভেসে এল।

“হ্যাম্পব্যাকের ওজন ২৪০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। আর ইরাবতী ডলফিনটির দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি; এটির ওজন ৭০ কেজি।”

তিনি বলেন, ডলফিন দুটির নমুনা সংগ্রহের পর সৈকতের বালিয়াড়িতে পুঁতে রাখা হবে।এক থেকে দেড় বছর পর ডলফিন দুইটির কঙ্কাল উত্তোলন করে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে কঙ্কালটি সংরক্ষণ করা হবে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের গবেষক সাংবাদিক আহমদ গিয়াস বলেন, “দুইদিনের মধ্যে এক সঙ্গে দুই প্রজাতির ডলফিন, পরপইস ও সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মরদেহ ভেসে আসার বিষয়টি অনুসন্ধান জরুরি। কেন বা কিভাবে সমুদ্রের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাণী দুটির মৃত্যু হলো তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন মনে করছি।”

স্তন্যপায়ী ‘ইরাবতী’ ও ‘পরপইস’ ডলফিন ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ বলছেন, প্রাণীগুলোর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নানা কারণে সাগরে এসব প্রাণীর মৃত্যু ঘটতে পারে। তবে প্রাণীগুলোর আবাসস্থলে কোনো বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে কি-না, তা অনুসন্ধানে তাদের বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন।

সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করে সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গত বুধবার কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি বিপন্ন স্তন্যপায়ী পরপইস ও বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের রেজুখালের মোহনায় একটি মা কচ্ছপ ও বিকালে হিমছড়ি সৈকতে একটি ইরাবতী প্রজাতির মৃত ডলফিন ভেসে এসেছিল।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া সৈকতে অন্তত ২০টি মৃত সামুদ্রিক কচ্ছপ ভেসে এসেছে।

গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ‘ইরাবতী’ ডলফিন এবং একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির আরেকটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। ১৮ এপ্রিল রাতেও একটি মরা তিমি ভেসে আসে কলাতলী সৈকতে।

২০২২ সালের ২৩ অগাস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল।

এছাড়া ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুইদিনে হিমছড়ি সৈকতে ভেসে এসেছিল দুটি মরা তিমি।