চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে দিনভর উত্তেজনার পর বিকালে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে।
Published : 18 Jan 2025, 11:02 PM
গাছের ডাল কাটাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে হাতাহাতি, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দিনভর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে উত্তেজনার পর দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার দুপুর থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা এবং কিরণগঞ্জ বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ির মাঝামাঝি সীমান্তবর্তী মাঠে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া জানান।
পরে বিকাল ৪টার দিকে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। সেখানে বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয় বলে জানান বিজিবি-৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।
তিনি রাত ৯টায় সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও শান্ত রয়েছে।
তবে দিনভর উত্তেজনার পর সীমান্তবর্তী ওই এলাকায় আতঙ্ক রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে সীমান্তবর্তী বিশ্বনাথপুর গ্রামের সুমন রেজা নামে এক যুবক সাংবাদিকদের বলেন, দুপুরে কিরণগঞ্জ বউবাজার এলাকার সীমান্তের ওপারে মাঠের জমি থেকে বাংলাদেশিরা কাঁচা গম কেটে নিয়েছে এই অভিযোগ তুলেন ভারতের নাগরিকরা। এরপর ভারতীয়রা বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে সীমান্তবর্তী মাঠের ৫-৭ বছর বয়সী বেশ কয়েকটি আম গাছ কেটে ফেলে।
এ ঘটনা জানাজানি হলে বাংলাদেশ সীমান্তের শত শত মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। অপরদিকে কয়েক হাজার ভারতীয়ও সীমান্তে অবস্থান নেয়।
সুমন রেজা বলেন, “এ সময় ভারতীয়রা পাথর নিক্ষেপ করে, হাসুয়া ছুড়ে মারে হাতবোমার ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। দুই দেশের মানুষের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ শুরু হয়। সীমান্তবর্তী দুই দেশের মানুষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাধানগর বাবলাবোনা গ্রামের রাজু বলেন, “ভারতীয়রা বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
পাঁকা পোলা গ্রামের রকি বলেন, “সংঘর্ষ চলাকালে ভারতীয়রা সীমান্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।”
বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. বাদশা বলেন, ভারতীয়দের ছোড়া পাথরে কালিগঞ্জ গ্রামের ফারুক ও সুজন আহত হয়েছেন। বিশ্বনাথপুর গ্রামের মো. রনি ভারতীয়দের হাসুয়ার কোপে আহত হন। আহত হয়েছেন কালিগঞ্জ নামো টোলা গ্রামের মেসবাউল হক মেসবাহ।
ঘটনার পর থেকেই সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সক্রিয় হন। তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ভারতেও অংশেও বিএসএফকে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়।
বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক
এই অবস্থার মধ্যে বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফ কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠক হয়। সীমান্ত পিলার ১৭৭/২-এস এর কাছে এই বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। অপরদিকে বিএসএফের পক্ষে ১১৯ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট সুরাজ সিং। এ ছাড়া উভয় বাহিনীর তিনজন করে সদস্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সীমান্তে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিজিবি কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া।
এ সময় তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তের মাঝামাঝি বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের গাছ কাটছিল ভারতীয়রা। এতে বাংলাদেশিরা বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। উভয়পক্ষ শূন্যরেখায় অবস্থান নেয়। এই ঘটনায় বিজিবি এগিয়ে এসে অবস্থান নিয়ে উত্তেজনা নিরসনে কাজ করে।
“অন্যদিকে বিএসএফও মব নিরসনে কাজ করতে এগিয়ে আসে। এমনকি মব নিরসনে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
“বৈঠকে গাছ কাটার ঘটনায় বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তারা।”
গোলাম কিবরিয়া বলেন, “উত্তেজনা প্রশমনে বিজিবি মাঠে রয়েছে। আমাদের সঙ্গে দেশপ্রেমিক জনগণ রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।”
পরে রাত ৯টার দিকে ৫৯ বিজিবির পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, “গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির এক পর্যায়ে আনুমানিক ৩০০-৪০০ জন ভারতীয় নাগরিক এবং তিন থেকে চার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক সীমান্তে শূন্যরেখায় সমবেত হয়। তারা একে অপরকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।