মুনতাসির আল জেমি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সোমবার রাতে বুয়েটে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
Published : 26 Feb 2025, 08:29 PM
কারাগারের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থেকে কীভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের খুনি পালিয়ে গেল সেই প্রশ্ন তুলেছেন তার মা রোকেয়া খাতুন।
আসামি পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কারো কোনো গাফিলতি আছে কি-না তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করা, আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
গত বছর সরকার পতনের একদিন পর ৬ অগাস্ট আবরার হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমি অন্য অনেক বন্দির সঙ্গে কারাগারের দেওয়াল ভেঙে পালিয়ে যায় বলে সম্প্রতি আদালতকে জানানো হয়। সংবাদ মাধ্যমে এ খবর আসার পর সোমবার রাতে বুয়েটে বিক্ষোভ করেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে তারা জানায়, ৬ অগাস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যান ওই কারাগারের ২০২ বন্দি। তাদের মধ্যে জেমিসহ ৮৭ জন ছিলেন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদি।
পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের ৩৫ জনসহ মোট ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করে ফের কারাগারের পাঠানো সম্ভব হয়েছে। তবে জেমিকে এখনো ধরতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
আবরার হত্যা মামলায় দণ্ডিত যে ২২ জনকে কারাগারে রাখা হয়েছিল, তাদের মধ্যে বাকি ২১ জন এখন কারাগারেই আছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।
সংবাদমাধ্যম থেকেই বিষয়টি জানতে পেরেছেন বলে জানান আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ সড়কের বাসায় বসে এ ঘটনায় নিজের ক্ষোভের কথা বলেন তিনি।
রোকেয়া খাতুন বলছিলেন, “ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার কনডেম সেল থেকে কীভাবে একসঙ্গে পালিয়ে যায়? আবরার হত্যা মামলার আপিল শুনানি সোমবার শেষ হয়েছে। সেদিনই জানতে পারি, জেমির জন্য কোনো আইনজীবী আদালতে হাজিরা দেননি। কেন জেমির আইনজীবী নাই এটা আদালত জানতে চায়। তখন আদালতকে জানানো হয় যে, জেমি পলাতক থাকায় তার কোনো আইনজীবী হাজিরা দেননি। তখনই আমরা বিষয়টি জানতে পারি।”
আবরারের মা প্রশ্ন তুলেন, “এতোদিন বিষয়টি গোপন থাকল কেন? ওখানে যে দায়িত্বে ছিলেন তিনি কি দেখেননি? নাকি জেগে জেগে ঘুমিয়ে ছিলেন? কেন আমাদের জানায় নাই তারা? কেন তারা দেশবাসীকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি?
“কারাগারের সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে, কর্তৃপক্ষ চাইলেই সব তথ্য উদঘাটন এবং তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।”
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা।
আবরার হত্যা: জেল পালানো জেমিকে নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা
আবরার হত্যা মামলার আপিল শুনানির উদ্যোগ
ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর মামলার রায়ে বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি ও আসামিদের ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় আছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মেহেদী হাসান রবিন, মো. মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মেহেদী হাসান রাসেল, মুনতাসির আল জেমি, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শাসছুল আরেফিন রাফাত, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, হোসেন মোহাম্মাদ তোহা, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- অমিত সাহা, মুহতামিম ফুয়াদ, ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আকাশ হোসেন ও মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা।