কয়রা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান বলেন, “জাহাজ থেকে লোক আনা-নেওয়ার বাইরে এ ঘাট থেকে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে। জাহাজের তেল চুরি সেই আয়ের অন্যতম উৎস।”
Published : 30 Mar 2024, 05:13 PM
খুলনার কয়রা উপজেলার আংটিহারা শুল্ক স্টেশনের ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। যেকোনো উপায়ে ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া তারা। এ নিয়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
খুলনা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের আওতাধীন এ শুল্ক স্টেশনে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা লাইটারেজ জাহাজের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। মাঝ নদীতে নোঙর করা এসব জাহাজ থেকে লোকজন আনা-নেওয়ার জন্য মাঝিদের নির্দিষ্ট ঘাট রয়েছে সেখানে।
কয়রা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান বলেন, “যেকোনো উপায়ে ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ফলে ওই এলাকায় উত্তেজনাও রয়েছে।”
সালাম বলেন, “জাহাজ থেকে লোক আনা-নেওয়ার বাইরে এ ঘাট থেকে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে। জাহাজের তেল চুরি সেই আয়ের অন্যতম উৎস।”
তার দাবি, বন্যপ্রাণী ও এসবের অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ মাদকদ্রব্য পাচারের অভিযোগ রয়েছে ঘাট নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।
নৌ শ্রমিক ও জাহাজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন এ নৌ পথে প্রতিদিন ২০-২২টি জাহাজ চলাচল করে।
ভারত থেকে সিমেন্টের কাঁচামাল ফ্লাইঅ্যাশ, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, পাথর, স্টিলের সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে ফেরে এসব জাহাজ।
প্রতিটি জাহাজ থেকে শুল্ক স্টেশনে লোকজন পারাপারের জন্য ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৬ হাজার টাকা হিসাবে মাসে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আয় হয় এ ঘাট থেকে।
এ টাকা ইঞ্জিনচালিত নৌকার তেলসহ অন্য খরচ বাদ দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে ১০ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত আছেন।
নৌ শ্রমিক ও জাহাজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, নৌ শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে এ ঘাট নিয়ন্ত্রণ করা হলেও আবু বক্কার নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এর নিয়ন্ত্রক। ঘাটটি দীর্ঘদিন ধরে মাঝি আবু বক্কারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত কয়েক মাস আগে তাকে সরিয়ে ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছিলেন স্থানীয় দক্ষিণ বেদকাশি ইউপির চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল।
তবে ২৬ মার্চ থেকে আবু বক্কার আবার ঘাটের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছেন।
এখন আবু বক্কারকে সরিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলীর পাশাপাশি ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শামসুর রহমানের ছেলে মশিউর রহমানও।
এর মধ্যে ঘাট থেকে কয়েকজন নৌ শ্রমিককে সরিয়ে দিয়ে নতুন লোকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এসব ব্যাপারে আবু বক্কার বলেন, “আমি ঘাটমাঝির পাশাপাশি শুল্ক স্টেশনে ‘কানামনা’ (কাজ নেই, মজুরি নেই) কর্মচারী হিসেবে ২০১২ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছি।
“নিজের শ্রম ও ব্যবসা করে অর্থ আয় করেছি। এখন অনেকেই আমাকে সরাতে চাইছেন। মূলত তারা চান ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জাহাজের তেল চুরি, বন্যপ্রাণী পাচার, মাদক পাচার করতে।”
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী বলেন, “আবু বক্কারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় তাকে ঘাটের সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন পুনরায় সে ঘাটে এসেছে বলে শুনেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমিও একসময় ওই ঘাটের দায়িত্বে ছিলাম। নিজের বিভিন্ন সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন খোঁজখবর রাখতাম না। তবে এখন সেখানে আমার লোকজন আছে।”
এ বিষয়ে মশিউর রহমান বলেন, “ঘাটমাঝি আবু বক্কার জাহাজের লোকজনকে জিম্মি করে তেল চুরি, মাদক পাচারসহ সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী পাচারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। স্থানীয় প্রভাব খাঁটিয়ে শুল্ক স্টেশনের দাপ্তরিক কাজও করেন তিনি। এভাবে কয়েক বছরে তিনি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। টাকার জোরে এখন কাউকে পাত্তা দিতে চান না।”
মশিউর আরও বলেন, “ঘাট থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজনকে সরিয়ে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়েছেন। আমি মূলত আওয়ামী লীগের লোকজনকে ঘাটে বসাতে চাই।”
এসব ব্যাপারে আংটিহারা শুল্ক স্টেশনের পরিদর্শক মো. কোরবান আলী বলেন, “এই রুটে প্রতি মাসে ছয় শতাধিক জাহাজ চলাচল করে। এখানে রাজস্ব নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। আমাদের কাজ শুধু জাহাজ আসা-যাওয়ার বিষয়টি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা।”
কোরবান বলেন, “এখানে যারা নৌশ্রমিকের কাজ করেন, তারা মাঝনদী থেকে জাহাজের নাবিকদের আনা-নেওয়ার কাজ করেন। তারা দাপ্তরিক নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ নন। এ জন্য তাদের কোনো বিষয়ে আমার জানা নেই।”