কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই পাকার মাথায় তিস্তা বাঁচানোর দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির শেষ দিনে বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন।
Published : 18 Feb 2025, 06:57 PM
যখনই বাংলাদেশের মানুষের তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার কথা আসে তখনই সেই আলোচনা পিছিয়ে দেওয়া হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মঙ্গলবার বিকালে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই পাকার মাথায় তিস্তা বাঁচানোর দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির শেষ দিনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ সোমবার থেকে উত্তরের পাঁচ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার এই অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে। মূলত বিএনপির নেতৃত্বে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় এই আন্দোলন হচ্ছে। সোমবার কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মঙ্গলবার সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আমির খসরু বলেন, “আমরা দেখেছি, যখনই তিস্তার দাবি আসে তখনই পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ ফেনী নদীতে সাতটি চুক্তি হয়েছে। সেখানে ভারতের লাভ হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের যেখানে পানি পাওয়ার কথা সেখানে পিছিয়ে দিয়ে মরুভূমি করা হয়েছে। তিস্তা নদীকে ঘিরেই মানুষের জীবন ও বাঁচার সংগ্রাম। সেখানকার জীব-বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা হয়েছে।”
ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের তিস্তার ন্যায্য হিস্যার দাবি পূরণ করতে হবে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “আজকের এই দাবি আমাদের প্রাণের দাবি। যখন একাধিক দেশের মধ্যে এই ধরনের নদী থাকে। সেগুলো পরিচালনার জন্য সব দেশের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা থাকে; যৌথভাবে তারা সেগুলো পরিচালনা করে।
“এখানে আজকের সেই ব্যবস্থপনা ব্যর্থ হয়েছে। আজকের এই দাবি হচ্ছে, সেই ব্যবস্থপনা ফিরিয়ে আনার। তিস্তা নদীর পানি বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য দাবি। এই দাবি পূরণ করতে হবে ভারতকে।”
এ সময় তিনি বলেন, “আগামীর বাংলাদেশ হবে সবার বাংলাদেশ। একটি দল বা গোষ্ঠীর বাংলাদেশ নয়। তারেক রহমান তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছেন, এই ডাক বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে। পানি যতদিন না আসবে ততদিন আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”
উলিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হায়দার আলী মিয়ার সভাপতিত্বে এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুলের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সদস্যসচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু, হাসিবুর রহমান হাসিব।
তিস্তা নদী সম্পর্কে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, নদীটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে।
এর মোট দৈর্ঘ্য ৪১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে ১১৩ কিলোমিটার। বাংলাদেশে তা রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে ৪০ কিলোমিটার তিস্তা নদী।
কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট ২৭ কিলোমিটার। অতি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট ২২ কিলোমিটার। প্রতিবছর গড়ে ২০০ থেকে ৪০০ ফুট করে নদী ভেঙে বসতবাড়ি, কৃষিজমি বিলীন হচ্ছে।
তিস্তা নদীর স্থায়ীভাবে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫ কিলোমিটার ব্লক দিয়ে তীররক্ষা প্রকল্প এবং চলতি বছর অতি ঝুকিপূর্ণ এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধে ছয় কিলোমিটার পয়েন্টে ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।