স্থানীয়দের দাবির মুখে গত বছরের জানুয়ারিতে নদীটি খননের কাজ শুরু করা সম্ভব হলেও কিছুদিন পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়।
Published : 27 Feb 2024, 10:40 AM
দখলদারদের মামলা জটিলতায় এক বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে হাকর নদীর খনন কাজ। এতে বন্যার প্রকোপ ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় উচ্ছ্বসিত বেনাপোলবাসী।
ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দীর্ঘ ৬৮ বছর যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী এ নদীটি দখলদারদের নানা স্থাপনায় মৃতপ্রায় হয়েছিল। স্থানীয়দের দাবির মুখে গত বছরের জানুয়ারিতে নদীটি খননের কাজ শুরু করা সম্ভব হলেও কিছুদিন পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়।
সব বাধা কাটিয়ে অবশেষে রোববার সকাল থেকে ফের হাকর নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে বেনাপোলের সাদিপুর চেকপোস্ট থেকে নারায়ণপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার নদী খনন করা হবে। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর বাকি অংশ পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে খনন করে বিভিন্ন বিলের সঙ্গে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে।”
ভারত-বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত হাকর নদীটি ভারতের ইছামতী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। নদীটি শার্শা উপজেলার বেনাপোলের সাদিপুর গ্রামে সীমান্তের ১৮ নম্বর সীমানা পিলার এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
পরে উপজেলার বড়আঁচড়া, ছোটআঁচড়া, ভবারবেড়, বেনাপোল ও নারায়ণপুর মৌজার মধ্য দিয়ে রঘুনাথপুরের কোদলা নদী হয়ে বেতনা নদীর সঙ্গে মিশে গেছে এ নদী।
বেনাপোলের একজন সচেতন নাগরিক ফারুক হোসেন উজ্জ্বল বলেন, প্রবহমান হাকর নদী ১৯৫৫ সালে দিকে নদীর দু’পারের প্রভাবশালী লোকজন দখল করে নেয়।
পরে ভূমি কর্মকর্তাদের সহায়তায় ১৯৬২ সালে হাকর নদী চলে যায় ব্যক্তি মালিকানায়। অনেক চেষ্টা করেও সেটি দখলমুক্ত করা যায়নি।
“দীর্ঘ ৬৮ বছর পর গত বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নদী খনন কাজে হাত দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু খনন ও ড্রেজিং শুরুর পর এলাকার প্রভাবশালীদের মামলা জটিলতায় তিন দফা বন্ধ হয়ে যায় কাজ।”
তবে নদী খননের পক্ষে এলাকার ৯৭ শতাংশ মানুষ অবস্থান নিয়েছে। অবশেষে আদালতের নির্দেশে এক বছর পর পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয়দের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “নদীটি খনন হলে আমরা বন্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাব এবং একে দখল করে গড়ে উঠা ভবন, মাছের ঘের, পুকুরসহ নানা স্থাপনাও এ সময় উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশা করি।”
পাউবোর প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগামী জুন মাসের মধ্যে খননকাজ সম্পন্ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাঁচ কিলোমিটার খনন কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার ৯৪ টাকা।
খনন কাজ শেষে বেনাপোলবাসী বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। যেমন জলাবদ্ধতা দূর হবে এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে বলেও জানান এই প্রকৌশলী।
ভারত সীমান্ত থেকে বেনাপোল পৌর ভবন পর্যন্ত হাকর নদীকে দখলমুক্ত করে পৌরবাসীর জন্য একটি সরোবর (লেক) তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন বেনাপোল পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন।
তিনি সেসময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “হাকর নদী উন্মুক্তকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ের আদেশের অপেক্ষায় আছি। শার্শার বাহাদুরপুরের বিপরীতে ভারতের শুটিয়ায় ফারাক্কার আদলে একটি বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
“বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বৃদ্ধি পেলে ভারত সেই বাঁধ খুলে দেয়। এতে বর্ষা মৌসুমে শার্শার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।”
পৌরসভার বর্তমান মেয়র নাসির উদ্দিনও বলেন, “পৌরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির মুখে হাকর নদী খনন শুরু হয়েছে। কয়েকটি ধাপে খনন কাজ শেষ হবে। নদীর ধারে গাছ লাগানোসহ ওভারব্রিজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ ফিরে পাবে পৌরবাসী।”
হাকর নদী দখলমুক্ত করা ও খননের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আলীকদর সাগর।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বছর বর্ষাকালে পানির চাপে ভারত বাঁধ খুলে দিলে বেনাপোল সীমান্তে বন্যার সৃষ্টি হয়। নদী খনন হলে মানুষ সেই বন্যা থেকে রক্ষা পাবে।”
শার্শা উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি বেনাপোলের আব্দুর রহিম বলেন, “আন্তঃসীমান্ত নদীটি দখলদারদের কারণে নাব্যতা হারিয়েছে। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর শার্শা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।”
“নদী দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন সময় আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। অবশেষে সরকার খননের উদ্যোগ গ্রহণ করায় আমরা আনন্দিত।”
পুরানো সংবাদ