বেনাপোলে হাকর নদী দখল করে স্থাপনা  

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত সংযোগ বেনাপোলের হাকর নদী দখল করে গড়ে উঠেছে ভবন, মাছের ঘের ও পুকুরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2019, 04:48 PM
Updated : 8 April 2019, 04:48 PM

যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার বেনাপোলের সাদিপুর গ্রামে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১৮ নম্বর সীমানা পিলার এলাকা দিয়ে হাকর নদী বাংলাদেশে ঢুকেছে। 

শার্শার বড়আঁচড়া, ছোট আঁচড়া, ভবারবেড়, বেনাপোল ও নারায়ণপুর মৌজার মধ্য দিয়ে রঘুনাথপুরের কোদলা নদী হয়ে বেতনা নদীর সাথে মিশে গেছে এ নদী।

ভারতের অংশে নদীটি থাকলেও বাংলাদেশের অংশে নদীর বুকে গড়ে উঠেছে একাধিক ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনা; খনন করা হয়েছে অনেকগুলো পুকুর।    

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তা নদীকে 'সমতল ভূমি' দেখিয়ে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করে দিয়েছেন। আর ভূমি কর্তৃপক্ষ বলছে বিষয়টি সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বেনাপোল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোল্যা বলেন, কুমুদিনী দাসী ও সূর্যকান্ত রায় চৌধুরী নামে দুইজন জমিদার নদীর জমির স্বত্ব দখলীয় হিসেবে ছিলেন। পরে এর স্বত্ব সরকারের কাছে চলে যায়। ১৯২৭ সালের সিএস রেকর্ডেও তা সরকারের নামেই ছিল।

পরে ১৯৬২ সালের এসএ জরিপে দেখা যায়- ছোটআঁচড়া মৌজার ১ নম্বর দাগে ৮ দশমিক ১৩ একর, বড়আঁচড়া মৌজার ১ নম্বর দাগের ৫ দশমিক ৬০, ভবারবেড় মৌজার ১ নম্বর দাগের ৪ দশমিক ২৩ ও বেনাপোল মৌজার ১, ৩৭২ ও ৪১১ নম্বর দাগে ২৪ দশমিক ৩৯ একর জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। এইভাবে স্থানীয় ৩০০-৩৫০ ব্যক্তি বর্তমানে নদীর জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে ভোগ-দখল করছেন বলে সাঈদ মোল্লার ভাষ্য।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আরও বলেন, “ভারতের পেট্রাপোলে বাংলাদেশে প্রবেশমুখে বেড়ি বাঁধ দিয়ে নদীর পানি চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষাকালে পানির চাপে বাঁধ খুলে দিলে বেনাপোল সীমান্তে বন্যার সৃষ্টি হয়।”

ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূমি জরিপ অফিসে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তদন্ত করে প্রমাণ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলীকদর সাগর বলেন, স্থলবন্দর বেনাপোলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নদীটি দখলমুক্ত করার বিকল্প নেই। আন্তঃসীমান্ত সংলগ্ন নদীটি দখলদারদের কারণে নাব্যতা হারিয়েছে। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর শার্শা উপজেলার বির্তর্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, "নাভারনের বেতনা নদীর সঙ্গে বেনাপোলের হাকর নদীর সংযোগ বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত পানির চাপে প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাঠের ফসল ও বাড়িঘর।" 

স্থানীয় অনেক প্রভাবশালী অসৎ উপায়ে আরএস রেকর্ডে হাকর নদীর সরকারি জমির মালিক হয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

ভারত সীমান্ত থেকে বেনাপোল পৌর ভবন পর্যন্ত হাকর নদীকে দখলমুক্ত করে পৌরবাসীর জন্য একটি সরোবর(লেক) তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, “হাকর নদী উন্মুক্তকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ের আদেশের অপেক্ষায় আছি। বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বৃদ্ধি পেলে শার্শার বাহাদুরপুরের বিপরীতে ভারতের শুটিয়ায় ফারাক্কার আদলে একটি বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত পানির চাপ এলেই ভারত সেই বাঁধ খুলে দেয়। এতে বর্ষা মৌসুমে শার্শার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।”

শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, “বাংলাদেশ অংশে হাকর নদী অবৈধ দখলদারদের কব্জায় চলে গেছে। অথচ ভারতের অংশে নদীটি স্বাভাবিকভাবেই প্রবহমান আছে। সিএস রেকর্ডের মালিকানা ধরে নদীটি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”

শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌসুমী জেরিন কান্তা বলেন, অবৈধ দখলদারদের কারণে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে হাকর নদী। সরকারি জমি কখনই ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হওয়ার সুযোগ নেই। তখনকার সময় সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বর্তমান দখলদাররা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। হাকর নদী দখলমুক্ত করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল বলেন, হাকর নদীর দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মামলার বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।