এক কৃষক জানান, মাঠে কাজ করতে গিয়ে দম বের হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয় তাদের।
Published : 27 Apr 2024, 11:23 PM
চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রতন আলীর মত অনেকের ক্ষেতের ধান পেকে আছে। পাশাপাশি পাট ক্ষেতের পরিচর্যা করারও সময়। কিন্তু চাষিদের ধান কাটা বা পাটের পরিচর্যায় করতে গিয়ে তীব্র দাবদাহের কারণে মাঠে ঠেকা দায়, প্রাণ যেন যায় যায়।
রতন আলী বলছিলেন, অন্যবার গ্রীষ্মেরও মাঝে-মধ্যে বৃষ্টির দেখা পেতেন; এতে গরমের তীব্রতা কমে যেত। কিন্তু এ বছর একটানা রোদ, তীব্র রোদ। মাঠে কাজ করতে গিয়ে দম বের হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয় বলে জানান তিনি।
দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ালগাছি গ্রামের খোদা বকস আদালতে আইনজীবী সহকারী হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি চাষাবাদও করেন। দুদিকেই সামাল দিতে হয় তার। কিন্তু পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে রোদ-গরমে তিনি মাঠে যেতে পারেননি বললেই চলে।
তিনি বলেন, “খুব ভোরে মাঠে গিয়ে কোনোরকমে কিছুটা কাজ করে কোর্টে চলে আসতে হয়। তীব্র গরমে কৃষকরা খুবই অসুবিধার মধ্যে আছেন।”
চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার নতুন ব্রিজের কাছে রিকশাভ্যান নিয়ে যাত্রীর আশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সদর উপজেলার মনিরামপুর গ্রামের আলমাছ আলী।
তিনি বলছিলেন, “রোদের কারণে খোলা ভ্যানে কেউ উঠছেন না। আমাদের আয়-উপার্জন কমে গেছে। আমরা নিজেরাও রোদের মধ্যে ভ্যান চালাতে পারছি না। রোদের কারণে এতো কষ্ট এর আগে কখনো হয়নি। রোদেও সহ্য করা যায়, এ বছর রোদের তেজ সহ্যের বাইরে।
উপরের কথাগুলো শুধু তিনজনেরই নয়; জেলায় বসবাসকারী সব মানুষের একই মন্তব্য।
সবাই বলছেন, এবারের দাবদাহ সহ্য করার মত নয়। আবহাওয়া অফিসের যে তথ্য, তাতে তা আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, গত ২৪ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির ওপরে। শেষের দুদিন তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রিরও ওপরে।
তিনি বলেন, পুরো এপ্রিল মাসজুড়েই আসলে তীব্র রোদের তাপ। ১২ এপ্রিলের পর থেকে আজ অবধি কখনো চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির নিচে নামেনি। ১২ থেকে ২৭ এপ্রিল টানা ১৬ দিন চুয়াডাঙ্গা
জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে গত ২৪ এপ্রিল গভীর রাতে চুয়াডাঙ্গায় ১.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ওই বৃষ্টিপাতের প্রভাব রোদ-গরমে পড়েনি।
কারণ রাত পেরিয়ে দিন শুরু হলেও সকাল থেকেই ছিল তীব্র রোদের তাপ। সেদিন বিকেল তিনটায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে স্বস্তিদায়ক কোনো কিছু ঘটেনি। এপ্রিল মাসের আগামী দিনগুলোতেও কোনো সুখবর নেই। বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই।
শনিবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেলা তিনটায় রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কাছাকাছি। মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৭ ডিগ্রি
সেলসিয়াস, চুয়াডাঙ্গায়, গত শুক্রবার। এই মাসের আগামী দিনগুলোও এভাবেই যাবে। তাপমাত্রা আরেকটু বেড়েও যেতে পারে।
চলমান এই তাপপ্রবাহের কারণে সব শ্রেণীপেশার মানুষ আছেন খুবই কষ্টে। মানুষ বাইরে এসে কাজ করতে পারছেন না। বেলা ১২টার পর থেকে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে যাচ্ছে। দুপুরের দিকে বেশিরভাগ মানুষ ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। রোগবালাইও বেড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান বলেন, “শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় কিছু রোগীকে বাইরের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও আছে রোগীর চাপ।”