“ছোটবেলায় বই কেনার পয়সা ছিল না। তখন ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির এ গাড়িটি আমাদের পাঠক হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।”
Published : 28 Dec 2024, 02:08 PM
“আমি নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির বই পড়ি। লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে যাবে শুনে কান্না পাচ্ছে।” বলছিল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের হরিমোহন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুনায়েদ আহমেদ।
দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। ভ্রাম্যমাণ এই লাইব্রেরি বন্ধ না করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বই প্রেমীরা ।
লাইব্রেরি বন্ধ না করার দাবিতে শুক্রবার বিকালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মোড়ে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বয়সী পাঠক মানববন্ধন করেন। সেখানে কথা হয় জুনায়েদের সঙ্গে।
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পের সেবা প্রদান সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। মেয়াদ শেষে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সেবা কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম বাস্তবায়ন পরিচালক মো. কামাল হোসাইনের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডর এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কথা সাহিত্যিক আনিফ রুবেদ বলেন, “এই প্রকল্পের চুক্তি জটিলতা আমরা জানি না। সামান্য মাসিক চাঁদায় একরকম বিনা পয়সায় খুব সহজে পাঠকের কাছে জ্ঞানের আলো দিয়ে যাচ্ছে এ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। প্রত্যন্ত এলাকার পাঠকরাও এ সেবা পাচ্ছেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ করব এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই না, কোনভাবেই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বন্ধ হোক।”
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, “কিশোর বেলা থেকে অনেকের মত আমিও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কল্যাণে বই পড়তে পেরেছি। এমন একটি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে শুনে মনে খুব কষ্ট হচ্ছে। বই পড়ার এই সুযোগটুকু চালু রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কবি ও কথা সাহিত্যিক আশরাফ জুয়েল বলেন, “ছোটবেলায় আমাদের হাতে বই কেনার পয়সা ছিল না। তখন ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির এ গাড়িটি আমাদের পাঠক হওয়ার সুযোগ
করে দিয়েছে।
“সরকারের সঙ্গে প্রকল্পের চুক্তি শেষ হয়েছে এমন অজুহাতে এমন মহৎ উদ্যোগকে গলা টিপে হত্যা করা ঠিক হবে না। আমরা যারা বই কিনতে পারি না ,তাদের স্বার্থেই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালু রাখার দাবি জানাচ্ছি।”
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম বাস্তবায়ন পরিচালক মো কামাল হোসাইনের স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ বলা হয়েছে, “দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্প (২য় সংশোধিত) ব্যবস্থাপনার সাথে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সেবা প্রদান সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ ৩১.১২.২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এর পরে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।”
এ বিষয়েবিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চাঁপাইনবাবগঞ্জের দায়িত্বে থাকা লাইব্রেরি কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি-গাড়ি ও অন্যান্য জিনিসপত্র ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে বুঝিয়ে দেওয়া এবং ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রমের যাবতীয় পাওনাদি বুঝে নিতে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।