Published : 05 Apr 2025, 08:14 PM
অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও সিট না পাওয়াসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়ার অভিযোগ করেছেন ময়মনসিংহ থেকে ঢাকামুখী যাত্রীরা। আর পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি তারা ‘স্বাভাবিক’ ভাড়াই নিচ্ছেন।
যাত্রীরা বলছেন, ঈদের ষষ্ঠদিনেও ভাড়া নিয়ে এমন নৈরাজ্য আগে কোনো বছর হয়নি। বেশি ভাড়া দিয়েও সেবা পাচ্ছেন না তারা। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
শনিবার সকালে ময়মনসিংহ পাটগুদাম ব্রিজমোড় নেমে দুটি ব্যাগ হাতে নিয়ে ঢাকার বাস কাউন্টারের দিকে যাচ্ছিলেন মধ্যবয়সী আইয়ুব আলী।
তিনি বলেন, “শেরপুরের নকলা থেকে সাধারণত ময়মনসিংহে ভাড়া হচ্ছে ১২০ টাকা। আর আমাকে বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে ২৫০ টাকা দিয়ে। একটি টাকাও কম নেয়নি। এ নিয়ে কোথায় কার কাছে অভিযোগ দিব বলেন? সবকিছু তো একটি নিয়মের মধ্যে চলা উচিত।”
শরিফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, “ভাই কোন দেশে বাস করি নিজেও বলতে পারি না। আজকে ঈদের ষষ্ঠদিনেও ডাবলের চেয়ে বেশি ভাড়া বৃদ্ধি। সাধারণ মানুষ নিরুপায় হয়ে যাচ্ছে, করার কিছু নেই। এমন অরাজকতা বন্ধে অন্তত পুলিশ থাকলে কিছুটা কম হত।”
আরেক যাত্রী পাপিয়া আক্তার বলেন, “নেত্রকোণা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত আসতে ৪০০ টাকা নাই। এখন যাব আব্দুল্লাহপুর সেখানে ভাড়া চাচ্ছে ৪০০ টাকা। তাহলে দেশটা কেমনে চলছে আপনারাই বলুন। এজন্য স্ট্যান্ডে এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি।”
শনিবার সকাল নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে অপেক্ষা করছেন শতশত যাত্রী। তারা গাজীপুর, ঢাকা নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ এবং শেরপুর থেকে এসেছেন।
একই চিত্র দেখা যায় নগরীর মাসকান্দা বাস টার্মিনাল এবং বাইপাসমোড়ে। সিট না পেয়ে অনেকে ট্রাক- পিকআপ ভ্যানে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন।
সকালে স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন এলাকায় একটি বাস চালকের সহকারীকে ঢাকতে শুনা যায়- ‘এই ঢাকা জোড়- ৯০০। চলে আসুন তাড়াতাড়ি, না হয় সিট পাবেন না।’
যদিও এই স্ট্যান্ড থেকে অন্যান্য দিনে ঢাকাগামী প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নেওয়া হয়।
সেখানে যাত্রী আবু সাঈদ বলেন, “যাব ঢাকা লোকাল বাসে সেখানে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ভাড়া নেয়া হত আজকে তারা ৪০০ টাকার কমে নিবে না। তাও আবার দাঁড়িয়ে যেতে হবে। সিট ফাঁকা নেই।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং প্রশাসন মনিটরিং করলে শতশত যাত্রী হয়রানী থেকে মুক্তি পেত বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
তবে চালক এবং তাদের সহকারীদের দাবি যাত্রী নামিয়ে দিয়ে তাদের খালি ফিরতে হয়। যার কারণে তারা কিছু ভাড়া বেশি নিচ্ছেন। এটা তারা শুধু শনিবার দিনের জন্যই নিচ্ছেন। রোববার থেকে সবকিছু আগের মতই হবে।
বেশি ভাড়া নেওয়াকে ‘স্বাভাবিক’ দাবি করে শ্যামলী বাংলা বাস চালকের সহকারী সোহেল রানা বলেন, “ঢাকা যাওয়ার পথে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ঢাকা থেকে খালি ফিরতে হচ্ছে। এই জন্য আমরা একটু ভাড়া বেশি নিচ্ছি।”
ইমাম পরিবহনের চালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “আজকে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীর চাপ বেশি। কারণ সবাই কর্মস্থলে ফিরছে। সারা বছর তো আমরা গাড়ি চালাই বলা চলে লস দিয়ে। তাই ঈদ আসলে কিছু ভাড়া অতিরিক্ত আমরা নেই, তবে যাত্রীরা এতে অখুশি না।”
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এমএম মোহাইমেনুর রশিদ বলেন, “মূলত আমরা যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকি। ভাড়া বেশি নিচ্ছে চালকরা সেটা আমরাও জানি। তবে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের কাজ না।”
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে পাটগুদাম এবং বাইপাসমোড়ে ঈদের আগে-পরে ম্যাজিস্ট্রেট রাখার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা ঈদের আগে একদিন শুধু বাইপাস মোড়ে ২০ মিনিটের জন্য গিয়ে যানজট তৈরি করে চলে আসছে।
“যাই হোক ভালো মন্দ সবাইকে ভাগ করে দিতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের তৎপরতা থাকলে যাত্রীরা আরও স্বস্তি পেত।”
জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, “ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে তাই আমার ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করছে। আমরাও নিয়মিত চেষ্টা করছি কেউ যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে। ”