কর্মী-সমর্থক নিয়ে শহিদুল ইসলাম বাবুল নিজের বাড়ি থেকে সদরপুর বাজারে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে’ মিছিলও করেন।
Published : 23 May 2024, 01:14 AM
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার একদিন পর এক চেয়ারম্যান প্রার্থী ‘জনগণের চাপে’ ফের ভোটের লড়াইয়ে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বাবুল একইসঙ্গে অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর চাপে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বুধবার সকালে নিজ বাসায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “জনগণের শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি হতে পারে না। আপনারা আমার ভাই, আমাকে দেখে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা আমাকে দেখে রাখবেন। আমি মাঠে থাকব, ইনশাল্লাহ।”
জনগণের দাবির মুখে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) আমি ফেইসবুক লাইভ বলেছিলাম যে, নির্বাচন করব না। কিন্তু আমি আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছি। আপনারা যে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দেখিয়েছেন সেই ভালবাসায় আমি থাকতে পারলাম না।”
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য নিজেই জোরপূর্বকভাবে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফেসবুক লাইভে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে বাধ্য করেছিলেন।
পরে কর্মী-সমর্থক নিয়ে নিজের বাড়ি থেকে সদরপুর বাজারে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে’ মিছিলও করেন শহিদুল ইসলাম বাবুল।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক লাইভে শহিদুল ইসলাম বাবুল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে সময় তার পাশে বসা ছিলেন সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেনসহ কয়েকজন।
ওই ফেইসবুক লাইভে তাকে আতঙ্কিত অবস্থায় দেখা যায়। এ সময় তিনি বলেন, “প্রিয় সদরপুরবাসী, আপনারা জানেন যে, আমি ২০১৪ সাল থেকে এমপি মহোদয়ের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমি আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছিলাম। কিন্তু তিনি (এমপি) আমার বাসায় গিয়ে আমার মায়ের হাত ধরে তার বাড়িতে আমাকে নিয়ে এসেছেন এবং আমাকে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন।
“আমি তার সম্মানার্থে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ালাম এবং এখন থেকে আমি আর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করব না।”
এই প্রার্থীর চাচাতো ভাই ফরহাদ মিয়া পরে আরেকটি ভিডিওতে অভিযোগ করে বলেন, “এমপি মহোদয় বাবুল ভাইয়ের আম্মাকে দেখার কথা বলে বাড়িতে এসে হাজার হাজার মানুষের সামনে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তাকে অস্ত্রের ভয় দেখানো হয়েছে। এমপির বাড়িতে জোর করে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছে।”
এ ঘটনার পর অভিমানে-কান্নায় ভেঙে পড়েন শহিদুল ইসলাম বাবুলের কর্মী সমর্থকেরা। ঘটনার পর থেকেই তার বাড়িতে অবস্থান নিতে শুরু করেন সমর্থকেরা। তাদের চাপের মুখেই বুধবার সকালে তিনি ভোটে ফেরার ঘোষণা দেন বলে জানান ফরহাদ মিয়া।
সদরপুর উপজেলা নির্বাচনে শহিদুল ইসলাম বাবুলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান। তিনি নিক্সন চৌধুরীর অনুসারী বলে পরিচিত।
এসব বিষয়ে সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সনের মোবাইল নম্বরে কল দিলে তিনি কেটে দেন।
এমনকি তার ব্যক্তিগত সহকারী মিরাজ মাতুব্বর ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। ফলে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক খান বলেন, “এমপির বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করে প্রার্থীকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে বলা যাবে যে এমপি নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করেছেন কি-না।”