“নারী ঘটিত কোনো ঘটনা বা অন্য কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না, সে ব্যাপারগুলো তদন্তে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।”
Published : 26 Jan 2025, 05:41 PM
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
শনিবার রাত ১০টার দিকে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় অর্ণবের বাবা নীতিশ কুমার সরকার এ মামলা করেন বলে ওই থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে খুলনা নগরীরর তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় অর্ণবকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি জানিয়ে ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাত ১০টার দিকে অর্ণবের বাবা হত্যা মামলা করেন। তাতে অজ্ঞাত পরিচয় ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন যে তিনজনকে আটক করা হয়েছিল, রোববার সকালে তাদের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার রাতে তেঁতুলতলা মোড়ে একটি চায়ের দোকানের সামনে মোটরসাইকেলে হেলান দিয়ে চা পান করছিলেন অর্ণব। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে কয়েকজন এসে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি গুলি অর্ণবের মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা অর্ণবকে মৃত ঘোষণা করেন।
অর্ণবদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর গ্রামে। খুলনার বেসরকারি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করে ২৬ বছর বয়সী অর্ণব মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পেশায় ঠিকাদার নীতীশ চন্দ্র সরকারের দুই ছেলের মধ্যে বড় অর্ণব। ছোট ভাই অনিক এবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তারা ১৫ বছর ধরে খুলনা নগরের বানরগাতি ইসলাম কমিশনারের মোড় এলাকার করতোয়া লেনে বাড়ি করে বসবাস করছেন।
অর্ণবদের কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, অর্ণব খুবই ‘ভদ্র’ ছিল। এলাকায় কারও সঙ্গে তাকে কোনো খারাপ আচরণ করতে দেখা যায়নি। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসাও দেখতো। হঠাৎ তার খুন হওয়ার খবর শুনে এলাকার সবাই অবাক হয়েছেন।
তাদের ভাষ্য, নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না কিছুতেই। বিশেষ করে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হচ্ছে খুলনা। ঘটছে কোপাকুপি ও গোলাগুলির ঘটনা। এতে চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নগরবাসী।
কারণ খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ
অর্ণবকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কোনো কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের ভাষ্য। পরিবারের পক্ষ থেকেও কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে না। কয়েকটি দিক সামনে রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
খুলনা নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, “ঘটনার পর পরই বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন দিক মাথায় নিয়েই তদন্ত কার্যক্রম চলছে।”
অর্ণবের শরীরে বেশ কয়েকটি গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, “ঘটনাস্থল থেকে তিনটি পিস্তলের গুলি ও একটি শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।”
বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অর্ণবের বাবা ঠিকাদার ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সেই ব্যবসা দেখাশোনা করতেন অর্ণব। এটা নিয়ে কোনো পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
“পাশাপাশি নারী ঘটিত কোনো ঘটনা বা অন্য কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না, সে ব্যাপারগুলো তদন্তে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।”
এদিকে নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলছে, শনিবার বেলা ১২টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর অর্ণবের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে মরদেহ বাড়িতে ঘণ্টাখানেক রেখে সৎকারের জন্য নেওয়া হয় শ্মশানে ।
বাড়িতে অর্ণবের মা, বাবার পাশাপাশি অনেক আত্মীয়-স্বজনরাও আহাজারি করছেন। অর্ণবের মাকে এখনও অর্ণবের খুন হওয়ার কথা জানানো হয়নি। তাকে বলা হয়েছে, অর্ণব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হত্যা: তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ, কারণ খুঁজছে পুলিশ